জয়পুরহাটের দিগন্ত মাঠ জুড়ে মাচায় ঝুলছে সবুজ করলা। এ দৃশ্য ক্ষেতলাল উপজেলার হাটশহর, বাখরা, মুনঝাড়সহ কয়েকটি (কলিঙ্গা, ঘুগোইল, কুসুমশহর, আটিদাশড়া, কোনিয়াপাড়া) গ্রামের মাঠগুলোতে। মানুষ এই গ্রামগুলোকে চেনে করলা গ্রাম নামে। এক সময় এখানকার দুই-একজন কৃষক করলা চাষ করলেও এখন শতভাগ পরিবার কোনো না কোনোভাবে করলা চাষের সঙ্গে যুক্ত।
বছরের বেশিরভাগ সময়জুড়ে মাটি, মানুষ আর প্রকৃতি কথা বলে করলা নিয়ে। অধিকাংশ কৃষক বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করে বদলে গেছে তাদের ভাগ্য। এখানকার উৎপাদিত করলা যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন এই গ্রামগুলোতে। একদিকে যেমন ফুটেছে কৃষকের মুখে হাসি অন্যদিকে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার কৃষকদের।
কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশী, এছাড়া স্বল্প সময়ে এ ফসল উঠানো যায় বলে দিন দিন করলা চাষে ঝুঁকে পরছেন তারা। তুলনামুলকভাবে অন্য ফসলের চেয়ে করলার ফলন বেশী হয়ে থাকে। এতে সেচ খরচ যেমন কম তেমনি রোগবালাই আর পোকা মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। ধান আর আলু প্রধান উপজেলার প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে নিজস্ব মেধা আর প্রযুক্তিতে করলা চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন এলাকার কয়েকশ কৃষক।
এক সময় এই সকল গ্রামের মানুষগুলো অভাবের কারণে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটলেও করলা চাষে সফলতা আসায় এখন তারা অনেকটায় স্বাবলম্বী। বীজ, জৈবসার, বালাইনাশক, করলার মাঁচাসহ সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে করলা চাষ করতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত করলা বিক্রি করা যায়। করলা রোপনের ২ মাসের মধ্যে করলা তোলা শুরু হয়। এক টানা ৫ মাস করলা তোলা যায়। আর করলার চাহিদা সারা বছরই থাকে।
অন্য ফসলের চেয়ে করলা চাষে লাভ বেশি। আর সে কারণেই করলা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। বর্তমানে প্রতি কেজি করলা প্রকারভেদে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগের সহযোগীতা পেলে এর চাষ ও উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেত বলে মনে করছেন চাষীরা।
জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ৫০০ শত মন করলা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হয়ে থাকে। এখানকার করলা গুনগত মানে বেশ ভাল হওয়ায় অন্য জেলায় এর চাহিদা অনেকটায় বেশি। আর এ কারনে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়িরাও। করলা বাজারজাত করতে স্থানীয় ভাবে গড়ে উঠেছে কয়েকটি স্থানে করলার হাট।
ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহিদুর রহমান জানান, উপজেলায় এবার করলার চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় এর চাষ দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগীতায় কৃষকদের প্রশিক্ষিত করতে পারলে অত্র এলাকা করলা রপ্তানীতে সুফল বয়ে আনবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন