শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম খোকন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ০২:০১ এএম

দক্ষিণী সিনেমার জয়জয়কার

রেজাউল করিম খোকন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ০২:০১ এএম

দক্ষিণী সিনেমার জয়জয়কার

দক্ষিণী সিনেমার জয়যাত্রা কোনোভাবেই থামছে না। বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ক্রমশ দক্ষিণী সিনেমার কাছে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছে। এ বছর বলিউডের বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের তারকা শিল্পীদের সিনেমা নিয়ে আগাম প্রত্যাশা ছিল। এই সিনেমাগুলোর মধ্যে কিছু বক্স অফিসে চরম হতাশাব্যঞ্জক ফলাফল করেছে। কিছু সিনেমা ডাহা ফ্লপ হয়েছে। আবার কিছু সিনেমা চলেছে বটে তবে সেগুলোর নির্মাণ ব্যয় তুলে আনা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত বলিউডের মোটামুটি সফল হিসেবে বিবেচিত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘ছাবা’, ‘সাইয়ারা’, ‘ওয়ার টু’, ‘সিতারে জামিন পর’, ‘রেইড টু’, ‘জলি এলএলবি থ্রি’ প্রভৃতির কথা বলা যায়।

এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য ব্যবসা সফল বলিউডের তেমন সিনেমা নেই। অথচ একটা সময়ে বছরের নয়-দশ মাসে এক ডজনেরও বেশি ব্লকবাস্টার হিট সিনেমা দেখা যেত। এখন সেই সুদিন আর নেই হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। বলা চলে উজ্জ্বলতা হারাতে বসেছে বলিউড। আজকাল বলিউডের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী ওয়েব সিরিজ কিংবা ওয়েব ফিল্মে ঝুঁকছেন। আবার অনেক দক্ষিণী সিনেমায় নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন জীবিকার তাগিদে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় চলচ্চিত্র শিল্প, যা টালিউড নামেও পরিচিত। বর্তমানে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে আধিপত্য বিস্তার করছে এবং আয়ের দিক থেকেও অনেক এগিয়ে আছে, যা বলিউডকে প্রতিনিয়ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রতি বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা সিনেমা ও সেরা অভিনেতার পুরস্কার দক্ষিণী চলচ্চিত্র ও অভিনেতাদের দখলে থাকছে, যা এই শিল্পের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রমাণ দেয়।

২০২১ সালে তেলেগু চলচ্চিত্র শিল্প ভারতের বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং পরের বছরগুলোতেও ক্রমাগতভাবে তেলেগু ও তামিল চলচ্চিত্রগুলো ভারতীয় বক্স অফিস আয়ের একটি বড় অংশ দখল করে। শুধু দক্ষিণ ভারত নয়, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের দর্শক; যেমন হিন্দি সিনেমার দর্শকরাও এখন দক্ষিণী চলচ্চিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। কিছু দক্ষিণী সিনেমা শুধু ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বিশ্বজুড়ে নিজেদের জানান দিচ্ছে এবং তাদের বড় বাজেট ও হিট সিনেমাগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করছে।

বর্তমানে দক্ষিণী সিনেমার দর্শকপ্রিয়তা তুঙ্গে এবং তারা প্রতিনিয়ত নতুন ও ভিন্নধর্মী গল্পের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করছে। বিশেষ করে মালায়লাম সিনেমার নির্মাণশৈলী দর্শকদের রীতিমতো আবিষ্ট করে রাখছে। তাদের সিনেমাগুলোর গল্প, শিল্পীদের দুর্দান্ত অভিনয়; গল্পের নতুনত্ব নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক শোভাম-িত জায়গাগুলোতে শুটিং, অপূর্ব সিনেমাটোগ্রাফির চমক দর্শকদের বারবার আকৃষ্ট করছে। কমেডি ড্রামা থেকে শুরু করে ফ্যান্টাসি, থ্রিলার ও অ্যাডভেঞ্চার- বিভিন্ন ধরনের সিনেমার মাধ্যমে দক্ষিণী চলচ্চিত্র শিল্প দর্শকদের মন জয় করছে, যা এই শিল্পকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।

দক্ষিণী সিনেমা এখন বক্স অফিসের আয়ের দিক থেকে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। প্রতিটি ব্লকবাস্টার হিট সিনেমার আয় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে অনায়াসেই, যা এই সময়ে বলিউডে অকল্পনীয় ব্যাপার হয়ে উঠেছে। দক্ষিণী সিনেমার সার্বজনীন আবেদন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তাদের সিনেমাতে অতি বাণিজ্যিক উপাদান থাকছে যেমন ভাবে তেমনিভাবে মানবিকতা, সমকালীন সমাজ বাস্তবতার আখ্যান দর্শকদের খুব সহজেই আলোড়িত করছে। দক্ষিণী চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন প্রতিভাদের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং তারা তাদের অভিনয় ও সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে দর্শকদের মধ্যে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করছেন।  উপমহাদেশের বিনোদন জগতে দক্ষিণী সিনেমার অবস্থা এখন রমরমা। বলিউডকে প্রতিনিয়ত টেক্কা দিচ্ছে। কিছু সিনেমা ভারতের গ-ি পেরিয়ে বিশ্ব কাতারে নিজেদের জানান দেয়। একের পর এক বড় বাজেট আর হিট সিনেমা তাদের ইন্ডাস্ট্রিকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা স্বতন্ত্র হলেও হিন্দির প্রচলন সর্বাধিক। তামিল, তেলেগু, মালায়লাম, কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের নিজস্ব ভাষায় সিনেমা নির্মাণ করে। তবে এসব সিনেমাকে প্যান-ইন্ডিয়ান করে তুলতে হিন্দি ভাষায় ডাবিং করা হয়। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে ডাবিং শিল্পীদের দিয়ে ভাষা পরিবর্তন করা হয়। আবার অনেক সময় বলিউডের বহু সুপারস্টারও দক্ষিণী বিভিন্ন ব্লকবাস্টার সিনেমার ডাবিং করছেন। সময়ের সঙ্গে ভারতের দক্ষিণী সিনেমার দর্শকপ্রিয়তার গ্রাফ ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে।

মজার ব্যাপার হলো, হিন্দি সিনেমার দর্শকরাও ক্রমান্বয়ে দক্ষিণের দিকেই ঝুঁকছেন। স্বাভাবিক কারণে দক্ষিণী সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের পারিশ্রমিকও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তারকা অভিনেতা নন, তারকা অভিনেত্রীরাও পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বক্স অফিসে নিজেদের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বেশ কজন তারকা অভিনেত্রীকে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করতে দেখা গেছে। চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া সাত নায়িকার নাম বলতে গেলে প্রথমে আসে সাই পল্লবীর নাম। সাধারণত রোমান্টিক-ড্রামা ঘরানার সিনেমায় বেশি দেখা যায় তাকে।

ভার্সেটাইল অভিনয়শিল্পী হিসেবেও দারুণ খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি। সাই পল্লবী বেছে বেছে কাজ করে থাকেন। ২০১৮ সালে তার অভিনীত ৪টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু তারপর আর এমনটা দেখা যায়নি। বলা যায়, বছরে তার অভিনীত একটি সিনেমা মুক্তি পায়। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘থান্ডেল’। এ সিনেমার জন্য ৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন সাই পল্লবী। তার পরবর্তী সিনেমা ‘রামায়ণ’। নীতেশ তিওয়ারি পরিচালিত এ সিনেমার জন্য ১৮-২০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন সাই পল্লবী। এ হিসাব অনুযায়ী, দক্ষিণী সিনেমার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী এখন সাই পল্লবী।

ভারতের প্রাক্তন ‘জাতীয় ক্রাশ’ রাশমিকা মান্দানা। টানা বক্স অফিসে ঝড় তোলা সিনেমা উপহার দিয়ে চলেছেন। ‘অ্যানিমেল’, ‘পুষ্পা টু’ সিনেমার পর তার অভিনীত ‘ছাবা’ সিনেমা বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে। ‘পুষ্পা টু’ সিনেমার জন্য ১০ কোটি রুপি এবং ‘ছাবা’ সিনেমায় অভিনয় করে ৪ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন এই অভিনেত্রী। বলিউডের সিনেমা ‘সিকান্দার’-এ তাকে সালমান খানের বিপরীতে দেখা গেছে। এ সিনেমার জন্য ১৩ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন রাশমিকা। এ বছর দক্ষিণী সিনেমা ‘কুবেরা’য় দেখা গেছে আরেক দক্ষিণী সুপারস্টার ধানুশের বিপরীতে। দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তৃষা কৃষ্ণান। ৪১ বছরের এই অভিনেত্রী ক্যারিয়ারে অনেক দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এখনও দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। প্রতি সিনেমার জন্য ১০-১২ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। চলতি বছরে সাতটি সিনেমার কাজ হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ ‘বিশ্বম্ভর’ সিনেমার জন্য ১২ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন তৃষা।

দক্ষিণী সিনেমার ‘লেডি সুপাস্টার’ নয়নতারা। কয়েক বছর আগেও দক্ষিণী সিনেমার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া নায়িকাদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন তিনি। তবে বিয়ে-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় কাজ কমিয়ে দেন। তবে ফের অভিনয়ে সক্রিয় হয়েছেন। ২০২৩ সালে ‘জওয়ান’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে তার অভিষেক ঘটে। সিনেমাটির জন্য ১০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নেন।

ভারতের দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু। অভিনয় ও শরীরি সৌন্দর্যে মুগ্ধ করেছেন তিনি। দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেত্রীদের তালিকায় এক সময় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন তেলেগু সিনেমার এই অভিনেত্রী। তবে বিবাহবিচ্ছেদ শারীরিক অসুস্থতা পিছিয়ে দেয় তাকে। সাধারণত প্রতিটি সিনেমার জন্য ৩-৮ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন সামান্থা। তবে ‘সিটাডেল: হানি বানি’-এর জন্য ১০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

অভিনেত্রী আনুশকা শেঠি তামিল-তেলেগু ভাষার অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে ‘বাহুবলি’ সিনেমায় অভিনয় করে বিশেষ খ্যাতি কুড়ান এই অভিনেত্রী। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ‘বাহুবলি’ সিনেমার পর আর কোনো ধামাকা উপহার দিতে পারেননি আনুশকা। ‘বাহুবলি টু’ সিনেমার জন্য ৬ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে তাকে চলচ্চিত্রে পাওয়া যায়নি বললেই চলে। চলতি বছরে কয়েকটি সিনেমার কাজ হাতে নিয়েছেন। তবে তার পরবর্তী সিনেমা ‘কানতারা’-এর জন্য ৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি তার অভিনীত ‘ঘাতি’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে।

দুই দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন তামান্না ভাটিয়া। তবে ‘বাহুবলি’ সিনেমা ফ্র্যাঞ্চাইজিতে অভিনয় করে বিশেষভাবে নজর কাড়েন এই অভিনেত্রী। ‘বাহুবলি টু’ সিনেমার জন্য ৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন। তার পরবর্তী সিনেমা ‘ওডেলা টু’। এ সিনেমার জন্য ৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন এই অভিনেত্রী। আজকাল বলিউডের অনেক সিনেমাতে আইটেম গানে পারফর্ম করতে দেখা যায় তাকে। আবার পাশাপাশি ওটিটিতেও সমানতালে বিচরণ করছেন সুন্দরী এই অভিনেত্রী।

দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা মানেই চারটি বড় ভাষার চলচ্চিত্রশিল্পÑতেলেগু, তামিল, কন্নড় ও মালয়ালম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ইন্ডাস্ট্রি অভূতপূর্ব সাফল্য ও জনপ্রিয়তার সাক্ষী হয়েছে। ‘বাহুবলী’, ‘কেজিএফ’, ‘আরআরআর’, ‘পুষ্পা’ থেকে ‘কান্তারা’-একেকটি সিনেমা রেকর্ড ভেঙেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা বলিউডকেও ছাপিয়ে গেছে। কেবল ঘরোয়া দর্শক নয়, বিশ্বজুড়েই এই সিনেমাগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। চিত্রনাট্যের বৈচিত্র্য, দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফি আর শক্তিশালী অভিনয়-সব মিলেই এই সাফল্য। আর সেই সাফল্যের ভাগিদার দক্ষিণের অভিনেতারা, যাদের পারিশ্রমিক আজ বলিউড সুপারস্টারদেরও ছাড়িয়ে গেছে।

২০২৫ সালে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত দক্ষিণ ভারতীয় তারকাদের কথা বলতে গেলে উল্লেখ করতে হয় যাদের নাম তাদের মধ্যে রয়েছেন অনেকেই। তামিলের বহুমুখী অভিনেতা ধানুশ প্রতিটি সিনেমাতে পাচ্ছেন ৩৫ কোটি রুপি। ৫০টির বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন, বলিউডে ‘রানাঝানা’ দিয়েও সাড়া ফেলেছেন। তার গাওয়া গান ‘হোয়াই দিস কোলাভেরি ডি’ ইউটিউবে প্রথম ভারতীয় ভিডিও হিসেবে ১০ কোটির বেশি ভিউ পায়। চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আটবার ফিল্মফেয়ার সাউথসহ বহু সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। এখন নিয়ে অভিনয়ের সঙ্গে নির্মাণ ও প্রযোজনা নিয়েও ব্যস্ত।

তামিল সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক সুরিয়া একটি সিনেমার জন্য পাচ্ছেন প্রায় ৩৯ কোটি রুপি। ‘খাখা খাখা’, ‘গজনি’, ‘আয়ান’-সবই তার সাফল্যের প্রমাণ। দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ছয়টি ফিল্মফেয়ার সাউথ জিতেছেন তিনি। তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেতা মহেশ বাবু এখন পর্যন্ত ২৫টি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। প্রতিটি সিনেমার জন্য তিনি নিচ্ছেন ৮০-১০০ কোটি রুপি। ‘ওক্কাডু’, ‘অথাডু’, ‘বিজনেসম্যান’, ‘ভরৎ আনে নেনু’ ও ‘সরকারু ভারি পাটা’ তার হিট সিনেমা। পাঁচবার ফিল্মফেয়ার, নয়বার নান্দী ও চারবার সাইমা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

‘আরআরআর’ দিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত রাম চরণ বর্তমানে নিচ্ছেন ১০০-১৩০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক। তার ঝুলিতে আছে চারটি ফিল্মফেয়ার ও দুটি নান্দী পুরস্কার। তামিল সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা কমল হাসান একাধারে হিন্দি, বাংলা, তেলেগু, কন্নড়, মালয়ালম-সব ভাষাতেই কাজ করেছেন। প্রতি সিনেমাতে তিনি পাচ্ছেন ১০০-১৫০ কোটি রুপি। ২২০টির বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। ‘মুন্দ্রাম পিরাই, ‘সাগর সঙ্গম’, ‘নায়কন’, ‘পুষ্পক বিমানা’, ‘দশাবতারম’, ‘বিশ্বরূপম’, ‘কাল্কি ২৮৯৮ এডি’ তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা।

তামিল ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বড় নাম অজিত কুমার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৬১টির বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। একেকটি সিনেমার জন্য তিনি নিচ্ছেন ১০৫ থেকে ১৬৫ কোটি রুপি। ‘ভারালারু’, ‘বিলা’, ‘কিরিদম’, ‘মঙ্কথা’ তার জনপ্রিয় সিনেমা। তিনবার ফিল্মফেয়ার সাউথ ও তিনবার তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন তিনি।

‘বাহুবলী’ ফ্র্যাঞ্চাইজি দিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিত প্রভাস এখনো শীর্ষ পারিশ্রমিকপ্রাপ্তদের একজন। প্রতিটি সিনেমার জন্য পাচ্ছেন ১০০-২০০ কোটি রুপি। তার হিট সিনেমার তালিকায় আছে ‘ডার্লিং’, ‘মিস্টার পারফেক্ট’, ‘সালার’ ও ‘কাল্কি ২৮৯৮ এডি’। প্রভাসই একমাত্র ভারতীয় অভিনেতা, যার ছয়টি সিনেমা মুক্তির শুরুতেই বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটির বেশি আয় করেছে।

দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার সর্বকালের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার রজনীকান্ত। সত্তরোর্ধ্ব বয়সেও তিনি এখনো পারিশ্রমিকের দিক থেকে শীর্ষে। ১২৫ থেকে ২৭০ কোটি রুপি নিচ্ছেন তিনি প্রতিটি সিনেমাতে। ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে ১৭০টির বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন বিভিন্ন ভাষায়। তার সাম্প্রতিক সিনেমা ‘কুলি’ আয় করেছে ৫০০ কোটির বেশি রুপি। দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, পদ্ম বিভূষণসহ বহু সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। তামিলের ‘থালাপতি’ বিজয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা। একেকটি সিনেমার জন্য তিনি নিচ্ছেন ১৩০-২৭৫ কোটি রুপি।

বর্তমানে রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থালাপতি বিজয়ের প্রথম তামিল সিনেমা ছিল ‘ঘিল্লি’। ২০০৪ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়, যা ৫০ কোটির ঘরে জায়গা করে নেয়। ‘থিরুপাচ্চি’, ‘পোক্কিরি’ তাকে শীর্ষনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। সাম্প্রতিক ব্লকবাস্টার ‘লিও’ ও ‘গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ তার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার সদম্ভ পদচারণা আলোড়ন তুলেছে সমগ্র ভারতজুড়ে।

তেলেগুর সুপারস্টার আল্লু অর্জুন ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ দিয়ে ঘরে ঘরে পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন। এর সিকুয়েল ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ গত বছর মাত্র ১৩ দিনে বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ৪০০ কোটির বেশি আয় করেছে, শুধু ভারতে ৯৫৩ কোটি। বর্তমানে তিনি প্রতি সিনেমাতে পাচ্ছেন প্রায় ৩০০ কোটি রুপি, যা তাকে কেবল দক্ষিণ ভারত নয়, পুরো দেশের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা বানিয়েছে। ২০০৩ সালে ‘গঙ্গোত্রি’ দিয়ে যাত্রা শুরু করা আল্লু অর্জুনের ঝুলিতে আছে ছয়টি ফিল্মফেয়ার, তিনটি নান্দী আর একটি জাতীয় পুরস্কার।

এ ছাড়া দক্ষিণী সিনেমার মালায়লাম ও কানাড়া সিনেমার অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয় অভিনেতা মোহনলাল, মামুথি, দুলকার সালমান, ফাহাদ ফাসিল, থোভিনো থমাস, ঋষভ শেঠি, মাধবন, সুরিয়া, বিজয় দেবোরাকান্ডা, ইয়াশ প্রমুখের কথা বলা যায়। তারা প্রত্যেকেই স্ব স্ব অবস্থানে উজ্জ্বলভাবে রয়েছেন। তাদের সবার রয়েছে বিরাট ভক্ত বলয়।

সব মিলিয়ে এই সময়ে দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি শুধু ভারতজুড়েই নয়, সারা পৃথিবীজুড়ে নানা প্রান্তে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে প্রবল আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে। এখানকার বিখ্যাত তারকাদের এবং গুণী নির্মাতাদের সিনেমা নিয়ে আগাম কৌতূহল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একসময় বলিউড বিনোদন শিল্পে যে দোর্দ- প্রতাপে রাজত্ব করেছে, এখন সেই প্রতাপ হাতছাড়া হয়ে চলে গেছে দক্ষিণী সিনেমার রথী মহারথীদের হাতে। বলিউডের বাঘা বাঘা চিত্রনির্মাতা ব্যানারগুলো তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!