- উত্তরায় দুজনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিল জনতা
- সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ১৭৪৮
রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একাধিক বিক্ষোভ মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণের অভিযোগে ১৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে উত্তরা রাজলক্ষ্মীতে দুই মিছিলকারীকে স্থানীয় জনতা ধাওয়া করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে হস্তান্তর করে।
পুলিশ বলছে, বেশ কয়েকটি স্থানে মিছিলের সময় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট ও মতিঝিলের রাজউক ভবনের গলিতে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। পল্টন থানার পুলিশ বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে মো. ওয়াসিম ও ফয়সাল নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। রাজউক ভবনের গলিতে মিছিলের প্রস্তুতিকালে কায়েস হাসান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া মতিঝিল এলাকা থেকে ঝটিকা মিছিল ও মিছিলের প্রস্তুতিকালে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুরে পৌনে ১২টার দিকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে আওয়ামী লীগের ১২ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী খুবই অল্প সময়ে একটি ঝটিকা মিছিল করেছেন। এ সময় তারা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। বেলা ১১টার একটু পর খিলক্ষেত থানার গলফ ক্লাবের সামনে ৩০ থেকে ৪০ জন ঝটিকা মিছিল করেন। মিছিল থেকে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ধানমন্ডির স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে নিউমার্কেটের বাটা সিগন্যাল, আসাদগেটের আড়ংয়ের সামনে, যাত্রাবাড়ীর মাল্টিমিডিয়া সিএনজি স্টেশন, শেরেবাংলা নগরের আর্কাইভ ভবনের সামনে, গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে মিছিল ও মিছিলের চেষ্টা চালান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় গুলশান থেকে ২৪ জন, ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকা থেকে তিনজন, নিউমার্কেট থানার পুলিশ ছয়জনকে, শাহবাগ পুলিশ তিনজনকে ও মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এ ছাড়া গতকাল সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে উত্তরার উদ্দীন রোড, রাজলক্ষ্মী ও হাউস বিল্ডিং এলাকায় এসব মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উত্তরা রাজলক্ষ্মী এলাকায় সকাল সোয়া ১০টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মিছিলে ১৫-১৬ জন উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় স্থানীয় জনতা তাদের ধাওয়া করে দুজনকে আটক করে। পরে তাদের গণধোলাই দিয়ে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাউস বিল্ডিং সংলগ্ন ৮ নম্বর সেক্টরের পুলিশ স্টাফ কোয়ার্টারের পাশের সড়কে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই মিছিলের পর সেখান থেকে অবিস্ফোরিত দুটি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। একই সময় উত্তরার জসীমউদ্্দীন রোড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলের চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে মিছিল করতে না পেরে তারা পরপর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান।
ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, ৮ নম্বর সেক্টরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও নাশকতার চেষ্টা করলে জনতার সহযোগিতায় ছয়জনকে আটক করা হয়। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল-সদৃশ বস্তু পাওয়া যায়। পরে এগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।
ডিএমপির সূত্র জানায়, এর আগে গত সোমবার রাতে উত্তরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার জেলার ডুলহাজারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি এখলাস মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-সাইবার বিভাগের একটি দল।
একই দিন রাত ১১টার দিকে ডিবি-ওয়ারী বিভাগের একটি দল শ্যামপুর থানার পোস্তগোলা এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ও রাজধানীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল সকালে আদাবর এলাকা থেকে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল দল।
অন্যদিকে গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ডিবি মতিঝিল বিভাগের একটি দল গুলিস্তানের আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক জুয়েল আহাম্মেদ রনি, ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী মো. রিয়াজ উদ্দিন ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আক্তার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
এদিকে, সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৭৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১ হাজার ২০১ জন এবং অন্যান্য ঘটনায় ৫৪৭ জন রয়েছেন। গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় গত ১০ মে গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে নিষিদ্ধ করা হয় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করেছেন। কোনো কোনো জায়গায় তারা প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন। কোথাও কোথাও প্রতিরোধ করতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছেন। পুলিশও ঝটিকা মিছিল ঠেকানো এবং মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা দেখিয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন