কার্তিকের শুরুতেই চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় শুরু হয়েছে আগাম আমন ধান কাটার উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে আমন ধান কাটা হয়, তবে এবার আগাম জাতের ধান পেকে যাওয়ায় কৃষক-কৃষানিরা এখন মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান-কাটা এবং মাড়াইয়ে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ব্রি ধান-৭৫ জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই জাতের ধান সাধারণত অন্যান্য জাতের তুলনায় ১০-১৫ দিন আগেই পেকে যায়। ফলে কৃষকরা ধান কাটার পর দ্রুত মাঠে রবিশস্য যেমন- আলু, মুলা ও শীতকালীন শাক-সবজি চাষের প্রস্তুতি নিতে পারছেন। কোথাও কোথাও শ্রমিকরা পারিশ্রমিকের পরিবর্তে খড়ের বিনিময়ে ধান কেটে দিচ্ছেন। এতে করে শ্রমিক ও কৃষক উভয়ই সন্তুষ্ট।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ফটিকছড়িতে ২২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পাওয়া যাবে।
হারুয়ালছড়ি এলাকার কৃষক রেদওয়ান আহমদ বলেন, ‘আমি ছয় বিঘা জমিতে ব্রি ধান-৭৫ জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। বিঘা প্রতি ১৬-১৮ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। বাজারে প্রতিমণ ৯৫০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। আগাম ধান কাটায় এখন জমিতে তিনটি ফসল ফলাতে পারছি।’
একই এলাকার আরেক কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, ‘এবার ১৮ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছি। ফলন ভালো হলেও শ্রমিকের মজুরি একটু বেশি হওয়ায় লাভ কিছুটা কমে যাচ্ছে।’
ধান কাটার কাজে নিয়োজিত কৃষি শ্রমিক জুয়েল মিয়া বলেন, ‘আমরা ১০ জন মিলে দল বেঁধে ধান কাটার কাজ করি। ধান কাটা-মাড়াইয়ের সময় ভালো আয় হয়, তবে নিত্যপণ্যের দাম বেশি থাকায় সেই টাকাটা সংসারের খরচেই শেষ হয়ে যায়।’
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, ‘উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান আবাদ হয়। এই ধান কাটার পর কৃষকরা একই জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করেন। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় এবার আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।’ ধান কাটার এ উৎসবে এখন উপজেলার কাঞ্চননগর, হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, নারায়ণহাট ও দাঁতমারা ইউনিয়নের হালদা নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে বইছে সোনালি আনন্দের জোয়ার- মাঠভরা ধান আর কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন