ভোলার বোরহানউদ্দিনে একই দিনে একই রোগীর রক্ত পরীক্ষায় (সিবিসি) তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনটি ভিন্ন ফলাফল আসায় চরম বিভ্রান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তার স্বজনরা। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে আলোচনা-সমলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার গঙ্গপুর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সামছুদ্দিন (২৮) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ অক্টোবর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিবিসি (কম্পপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) টেস্ট করতে নির্দেশ দেন। হাসপাতাল গেটের সামনে অবস্থিত নিউ জনসেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে রিপোর্টে প্লেটলেট কাউন্ট (পিসি) পাওয়া যায় ৫৫ হাজার। রিপোর্ট দেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাকে ডেঙ্গু পজিটিভ শনাক্ত করে চিকিৎসা দেন এবং প্রতিদিন প্লেটলেট পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেন।
পরদিন (২৮ অক্টোবর) এস এস মেডিকেল সার্ভিস নামের ডায়াগনস্টিকে টেস্ট করলে রিপোর্টে প্লেটলেট নেমে আসে ১৮ হাজার। অথচ রোগী শারীরিকভাবে উন্নতি অনুভব করছিলেন। এতে সন্দেহ হলে তিনি একই দিনে নিউ ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করান, যেখানে রিপোর্টে প্লেটলেট দেখায় ৬৯ হাজার। এত বড় পার্থক্য দেখে সামছুদ্দিন ফলাফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তাকে পূর্বের নিউ জনসেবা ডায়াগনস্টিকে আবার টেস্ট করতে বলেন। কিন্তু একই দিনে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে আবার পরীক্ষা করালে এবার রিপোর্টে দেখা যায় ১ লাখ ৪৫ হাজার প্লেটলেট।
ভুক্তভোগী সামছুদ্দিন বলেন, ‘একই দিনে ৩ জায়গায় টেস্ট করে ৩ রকম রিপোর্ট পেয়েছি। আমি নিজে শারীরিকভাবে ভালো বোধ করছিলাম, কিন্তু এক রিপোর্টে বলে প্লেটলেট ১৮ হাজার, অন্যটায় ৬৯ হাজার, আবার আরেকটায় ১ লাখ ৪৫ হাজার! আমি বুঝতে পারছি না আসলে কোনটা ঠিক! রোগী হিসেবে আমরা কাকে বিশ্বাস করব?’
জানতে চাইলে নিউ ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিকের টেকনোলজিস্ট তাহমিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের রিপোর্ট যাচাই-বাছাই করেই দেওয়া হয়েছে, কোনো ভুল নেই। রোগীর প্লেটলেট ৬৯ হাজারই ছিল, এটাই সঠিক।’
নিউ জনসেবা ডায়াগনস্টিকের টেকনোলজিস্ট মো. সেলিম দাবি করেন, ‘আমরা ২৭ তারিখে রোগীর প্লেটলেট পেয়েছিলাম ৫৫ হাজার, পরদিন টেস্টে পেয়েছি ১ লাখ ৪৫ হাজার। আমাদের রিপোর্টই সঠিক।’
অপরদিকে এস এস মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সুদক্ষ টেকনোলজিস্ট দ্বারা স্যাম্পল সংগ্রহ করি। রোগীর প্লেটলেট আমরা পেয়েছি ১৮ হাজার, এটাই সঠিক।’
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই রোগীর রিপোর্টে এত বড় তারতম্য ডায়াগনস্টিক সেক্টরে মান নিয়ন্ত্রণ, যন্ত্রের ক্যালিব্রেশন ও প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্টের ঘাটতির বড় প্রমাণ। এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি রোগীর আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কে এম রেজোয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘একই দিনে একই রোগীর ৩টি ভিন্ন রিপোর্ট পাওয়া মান নিয়ন্ত্রণে বড় প্রশ্ন তোলে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান উজ্জামান বলেন, ‘রোগীর টেস্ট চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 
                             
                                    
                                                                 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                    -20251031020255.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন