জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ আগামী ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন আদালত। দিনটিকে সামনে রেখে হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সোমবার মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর ও ধানমন্ডি ল্যাবএইড হসপিটালের সামনে চারটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়াও হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে এসে ঢাকার অন্তত ৯ জায়গায় প্রায় ২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাতরা। একদিকে ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ ও ঝটিকা হামলায় জননিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে। অন্যদিকে এসব ঘটনার ফলে সাধারণ মানুষের মনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের এ সহিংস কার্যক্রম দেশের স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন ও জনগণের নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি।
যেকোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ক্ষমতার আকাক্সক্ষার চেয়ে বড় হলো দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা। কিন্তু নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ যে নাশকতামূলক কর্মকা-ে জড়াচ্ছে, তা স্পষ্টতই একটি ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করা, প্রশাসনকে চাপে ফেলা এবং ভয় সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। বাসে আগুন দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো বা রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে হামলা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এগুলো সুস্পষ্ট সন্ত্রাসী কার্যক্রম।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এখন দায়িত্ব, যেকোনো মূল্যে নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা এবং দেশের জনগণকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর ও দৃঢ় পদক্ষেপ। রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, চেকপোস্ট ও তল্লাশি বাড়াতে হবে, একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি আরও শক্ত করতে হবে। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের দলীয় পরিচয় নয়, অপরাধীর পরিচয়েই আইনের আওতায় আনতে হবে।
একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টাও এখন বড় হুমকি। সরকারকে এই ডিজিটাল অরাজকতা রোধে সক্রিয় হতে হবে। গুজব রটনাকারীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকতে হবে, যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো তথ্য যেন কেউ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে না দেয়।
দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এখন সবচেয়ে জরুরি হলো জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার। মানুষকে বুঝতে হবে, রাষ্ট্র তার পাশে আছে, সরকার তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আতঙ্ক নয়, আস্থা ছড়াতে হবে।
দেশের মানুষ শান্তি চায়, স্থিতিশীলতা চায়। যারা নিষিদ্ধ সংগঠনের পতাকাতলে দাঁড়িয়ে সহিংসতা চালাচ্ছে, তারা জনগণের শত্রু। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, যাতে কেউই ‘লকডাউন’ বা সহিংস কর্মসূচির নামে জনগণের জীবন নিয়ে খেলা করতে না পারে।
নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি জনআস্থা ফিরিয়ে আনা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মাঠে থাকছে, এটা আশ্বস্ত হওয়ার মতো খবর।
এদেশের মানুষ বারবার সংকট মোকাবিলা করেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, বোমা হামলা বা নাশকতা দিয়ে তাদের মনোবল ভাঙা যায়নি। তাই আবারও সেই পুরোনো আতঙ্কের রাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সফল হবে না, এ বিশ্বাস রাখতে হবে। আদালত তার কাজ করবে, সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে, আর জনগণ সচেতন থাকবে, এই সমন্বয়েই শান্তি ও স্থিতি ফিরবে।
রাজধানীসহ দেশের মানুষের মধ্যে যে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে, তা দূর করা এখনই জরুরি। নৈরাজ্য দমন যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন আস্থা ফিরিয়ে আনা। আইন প্রয়োগে কঠোরতা হোক, কিন্তু যেন ন্যায় ও মানবিকতার সীমা অতিক্রম না করে। কারণ ভয় যদি মানুষের মনে বাসা বাঁধে, তবে তাতে হারাবে শুধু নিরাপত্তা নয়, হারাবে সমাজের বিশ্বাস ও স্থিতিশীলতা।
আমরা মনে করি, নিরাপত্তাহীনতার রাজনীতি দিয়ে কোনো দেশের ভবিষ্যৎ গড়া যায় না। তাই এ মুহূর্তে নৈরাজ্যকারীদের দমন এবং আতঙ্কে কাঁপা জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে হবে, দেশে কোনো সন্ত্রাসী রাজনীতি চলবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন