বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:৪৭ এএম

বর্জ্যে দূষিত সুগন্ধা নদী

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:৪৭ এএম

বর্জ্যে দূষিত সুগন্ধা নদী

**** ঝালকাঠি পৌরসভা
**** প্রাকৃতিক আবাসস্থল হারাচ্ছে মাছসহ জলজপ্রাণী, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
**** হুমকিতে পড়েছে মানুষের স্বাস্থ্য ও নদীনির্ভর জীবিকা
**** দেড়শ বছরেও হয়নি ডাম্পিং স্টেশন, নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য
**** ডাম্পিং স্টেশনের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে, বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে : পৌর প্রশাসন

ঝালকাঠি পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় শহরের ময়লা-আবর্জনা প্রতিদিন সরাসরি ফেলা হচ্ছে জেলার প্রধান নদী- সুগন্ধায়। এতে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে নদী, বিলীন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, হুমকিতে পড়েছে মানুষের স্বাস্থ্য ও নদীনির্ভর জীবিকা। নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে রোগ জীবাণু, ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ, আর মাছসহ জলজপ্রাণী হারাচ্ছে প্রাকৃতিক আবাসস্থল।

জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধা নদী। শত শত বছর আগে এই নদীর তীরেই গড়ে ওঠে ঝালকাঠি শহর। পরে ১৮৭৫ সালে গঠিত হয় পৌরসভা। অথচ দেড়শ বছরেও এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো নিয়মনীতি তৈরি করা হয়নি। যুগ যুগ ধরে এ নদীর তীরে গড়ে উঠেছে ঝালকাঠির জীবনযাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্য। কিন্তু বর্তমানে এ নদীতে শহরের ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলার স্থানে পরিণত হয়েছে।

পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে সংগৃহীত ময়লা গাড়িতে ভরে এনে সরাসরি নদীতে ফেলে আসছেন। এতে নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে প্লাস্টিক, পলিথিন, বাসাবাড়ির আবর্জনা ও মেডিকেল বর্জ্য। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এ অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ফেলার কারণে আশপাশের মানুষের জন্য নদীর পানি এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, পৌরসভার খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকা নদীতে ময়লা ফেলার প্রধান স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা আবর্জনা এনে নদীর পাড়েই ফেলা হয়, যা বৃষ্টির পানিতে ও জোয়ারের সঙ্গে নদীতে মিশে যাচ্ছে।

উন্নয়নকর্মী আজমীর হোসেন বলেন, নদীতে ছড়িয়ে পড়া প্লাস্টিক মাছ খাচ্ছে, আর সেই মাছের মাধ্যমে বিষক্রিয়া মানুষের শরীরে ঢুকছে। আগের মতো সুগন্ধার মাছের স্বাদও আর নেই। আগে এই নদীতে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ মিলত, এখন প্রায় হারিয়ে গেছে অধিকাংশ মাছ।

পরিবেশবিদদের মতে, সুগন্ধা নদী একসময় ইলিশের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। নদীর স্বচ্ছ পানি ও পর্যাপ্ত অক্সিজেনের কারণে ইলিশসহ দেশীয় মাছের প্রজননের জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল এখানে। কিন্তু এখন নদীর পানির গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ইলিশসহ নানা মাছের সংখ্যা কমে গেছে।

ঝালকাঠির নদী-খাল রক্ষা কমিটির সদস্য প্রশান্ত দাস হরি বলেন, একটা প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় ডাম্পিং স্টেশন থাকবে না- এটা মানা যায় না। খোদ পৌরসভাই নদী দূষণের জন্য দায়ী। নদী রক্ষার কথা বলে মাঝেমধ্যে প্রচারণা হয়, কিন্তু প্রতিদিন পৌরসভার গাড়িতেই ময়লা গিয়ে পড়ছে নদীতে।

নদীর তীরের পৌর খেয়াঘাট এলাকার মাঝি নয়ন অভিযোগ করেন বলেন, যেখানে ময়লা ফেলে তার পাশেই আমাদের ঘাট। সকালে ঘাটে নামলেই দুর্গন্ধে থাকা যায় না। গন্ধে ট্রলার চালাতেও কষ্ট হয়। পৌরসভার লোকজন প্রতিদিন গাড়ি ভর্তি করে এখানে ময়লা ফেলে রেখে যায়। তিনি আরও বলেন, নদীতে ময়লা ফেলার কারণে শুধু পানি নয়, আশপাশের বাতাসও দুর্গন্ধ ছড়ায়। খেয়াঘাটের পাশে বসবাসকারী পরিবারগুলো নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।

ময়লা ফেলার জায়গার পাশে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল হাওলাদার রনি বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই পৌরসভার বর্জ্য ফেলার স্থান। দিন-রাত দুর্গন্ধে থাকা যায় না। মশা-মাছি বেড়ে গেছে, শিশুরা অসুস্থ হচ্ছে। আমরা বারবার পৌরসভায় অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।

ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা প্রায়ই পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি করি। কিন্তু শহরেই যদি নদীতে ময়লা ফেলা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের কীভাবে শেখাব আমরা পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব? এই অবস্থা চলতে থাকলে বিপন্ন হবে পরিবেশ।

ঝালকাঠি পৌরসভার পৌর প্রশাসক মো. কাওছার হোসেন বলেন, ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে। এ সমস্যার সমাধান অচিরেই হবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই শহর পরিষ্কার থাকুক, কিন্তু তার জন্য পরিবেশ ধ্বংস করা ঠিক নয়। তাই টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৫ সালে যাত্রা শুরু হয় ঝালকাঠি পৌরসভার। প্রায় দেড় শতাব্দী পুরোনো ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় বর্তমানে প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস। অথচ এখনো আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুগন্ধা নদী বাঁচানো মানে ঝালকাঠির অস্তিত্ব রক্ষা করা। দ্রুত ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক উদ্যোগ না নিলে এই নদীগুলো ধ্বংস হবে যা আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ হুমকি। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!