রাজশাহীতে বাসায় ঢুকে বিচারকের ছেলে তাওসিফ রহমানকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় মামলার আসামি লিমন মিয়া কীভাবে ভিকটিমকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিলÑ এমন অভিযোগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে আদালতে তলব করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাজপাড়া থানার আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশিদ এ-সংক্রান্ত আদেশ দেন। আগামী ১৯ নভেম্বর তাকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসায় প্রবেশ করে তার ছেলেকে হত্যা এবং স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামি লিমন মিয়ার (৩৪) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর নেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মো. মামুনুর রশিদ এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আরএমপি কমিশনারকে তলবে আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ১৭ বছর বয়সি ছেলে তাওসিফ রহমানকে কৌশলে বাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেন লিমন মিয়া। একই সময়ে জজের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর আহত করেন তিনি। ঘটনার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে হাসপাতালেও ভর্তি করে। কিন্তু এরপর পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় লিমন মিয়া বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভিকটিমকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। আদালত মনে করেন, এটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
তাই পুলিশ হেফাজতে থেকে আসামিকে মিডিয়ার সামনে বক্তব্যের সুযোগ করে দেওয়ায় আরএমপি কমিশনারের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে নাÑ তার কারণ জানতে আদালত তাকে তলব করেছেন। আগামী ১৯ নভেম্বর এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আসামির ৫ দিনের রিমান্ড : আরএমপি মুখপাত্র গাজিউর রহমান আসামি লিমন মিয়ার রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আসামির সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন। শুনানি শেষে আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিনি আরও জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসাধীন লিমন মিয়াকে হাসপাতাল ত্যাগের অনুমতি দেন। এরপর দুপুর ২টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত থেকে তাকে রাজপাড়া থানায় নেওয়া হয়। সেখানে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা- এবং হত্যাচেষ্টার ঘটনার ব্যাপারে লিমন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার শহরের তেরখাদিয়া ডাবতলা এলাকায় বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসায় আকস্মিক প্রবেশ করেন গাইবান্ধার ফুলছড়ির বাসিন্দা লিমন মিয়া। এরপর তিনি বিচারকের ছেলে তাওসিফ রহমানকে (১৫) ছুরিকাঘাত ও শ^াসরোধে হত্যা করেন। লিমন মিয়ার ছুরিকাঘাতে বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসিও (৪৪) আহত হন। এ সময় ধস্তাধস্তিতে হামলাকারী লিমন মিয়াও আহত হন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
এদিকে নৃশংস এই হত্যাকা-ের ঘটনায় পরদিন শুক্রবার নিজে বাদী হয়ে লিমন মিয়াকে একমাত্র আসামি করে রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমান। আসামি এই হত্যাকা- পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন