রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আব্দুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

সিলেট-১ আসন

নির্বাচনি আলোচনায় তরুণ ভোটার

আব্দুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

নির্বাচনি আলোচনায় তরুণ ভোটার

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিলেট জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সিলেট-১ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসন। দীর্ঘদিন ধরেই এই আসন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না দলটি। এ কারণে এ আসনে ভোটের সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে গেছে। বিশেষ করে এ আসনে এবার ভোটার বেড়েছে ৪০ হাজারের বেশি, যাদের বড় অংশই ১৮-৩০ বছর বয়সি। তরুণ ও নতুন এই ভোটারদের ভোটদানের বিষয়টি উপস্থিতি নির্বাচনি আলোচনায় আওয়াজ তুলেছে। এই তরুণ ভোটারদের ভোট আজ রাজনীতি সমীকরণে নতুন বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনের নির্বাচনি লড়াই এবার আর পুরোনো রাজনীতির ধারায় নেই। ভোটারদের বড় অংশ তরুণ হওয়ায় তাদের দাবি-প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে পুরো রাজনৈতিক মাঠ। উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও নাগরিক সুবিধার স্পষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া কোনো প্রার্থীর জন্যই এই আসনে বিজয় পাওয়া সহজ হবে না।

সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে এ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৬ লাখ ৭৪ হাজার ১৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৯ জন, নারী ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৩৯ জন এবং হিজড়া ভোটার রয়েছেন ১৩ জন। গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে ভোটার ছিলেন ৬ লাখ ৩৪ হাজার ২১ জন। অর্থাৎ, এবার ভোটার বেড়েছে ৪০ হাজার ১৫০ জন।

বয়সে কম হলেও তরুণ ভোটাররা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সক্রিয়। সচেতন, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী এই প্রজন্ম কাউকেই অন্ধ আনুগত্যে ভোট দেবে নাÑ এমনটাই বলছেন তরুণেরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই প্রার্থী মাঠে বাস্তব কাজ করুক। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নই হবে ভোটের মানদ-।’

স্থানীয় নারী ভোটার সেলিনা আক্তার ও ছাত্রী রিফাত আক্তার বলেন, ‘শিক্ষা, চাকরি, সামাজিক সুযোগÑ এগুলোতে পরিবর্তন চাই। কথার রাজনীতি নয়, কাজের রাজনীতি চাই। আমরা চাই প্রার্থী শুধু নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি না দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন সমস্যা যেমনÑ সড়ক, শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবাÑ এগুলো সমাধান করুক।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী আজম আলীর মতে, ‘সড়ক, পানি সরবরাহ ও বাণিজ্য উন্নয়নÑ এসব নিয়ে প্রার্থীদের স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। আমরা কাজ চাই, প্রতিশ্রুতি নয়।’

একইভাবে সাধারণ নাগরিকের দাবির তালিকায় উঠে এসেছে, নগরীর সড়ক ও গণপরিবহন উন্নয়ন, ড্রেনেজ ও বন্যা মোকাবিলা, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নাগরিক ক্লিনিক ও হাসপাতালের সেবা, নিরাপদ পানীয় জল ও স্যানিটেশন, যুবক ও নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ।

স্থানীয় দোকানি আব্দুল খালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই সিলেট শহর ডুবে যায়। এবার আমরা বুঝেশুনে ভোট দেব।’ দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা আফরিন নওরিন বলেন, ‘কে মিথ্যা বলে, কে কাজ করে, ফেসবুক-টিকটকেই ধরা পড়ে যায়। আগের মতো মানুষ বোকা নয়।’

নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, প্রার্থীরা তাদের প্রচারণায় সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভর করছেন। তরুণেরা এখন অনলাইনে সক্রিয়, তাই কার প্রতিশ্রুতি সত্য, কার প্রতিশ্রুতি কাগজে-কলমে, তা তারা যাচাই করতে পারছেন সহজেই। স্বাধীনতার পর এই আসনে আওয়ামী লীগ ছয়বার, বিএনপি চারবার, জাতীয় পার্টি একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনে না থাকায় মূল লড়াই বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, জমিয়ত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে বিএনপি ও জামায়াত। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। তার সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আরিফুলের কর্মী-সমর্থকদের নিজের দিকে আনতে না পারলে মুক্তাদিরকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপি এখানে ঐক্যবদ্ধ ছিল। এখনো সবাই ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ।’

জামায়াত প্রথমে এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মনোনয়ন দিলেও পরে মাওলানা হাবিবুর রহমানকে প্রার্থী করে। দীর্ঘদিন পর নতুনভাবে দল সাজিয়ে মাঠে নামছেন তিনি। এদিকে এনসিপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হক। আর খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট ও বাসদ থেকেও সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন।

সিলেটের রাজনীতিতে প্রবাসী সিলেটিদের প্রভাব বরাবরই। প্রবাসীদের অর্থায়নে কয়েকজন প্রার্থী ইতিমধ্যে প্রচারণা জোরদার করছেন। যদিও তারা ভোট দিতে পারবেন না, তবে পরিবার-স্বজনদের সিদ্ধান্তে তাদের অবস্থান বড় ভূমিকা রাখে। এদিকে গত নির্বাচনে এ আসনে ভোট হয়েছিল প্রায় ৬৫ শতাংশ। এবার সেই হার আরও বাড়বে বলে প্রশাসনের ধারণা। কারণ তরুণদের উৎসাহ কখনো এত বেশি দেখা যায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় প্রতীকের প্রতি ঐতিহ্যগত আগ্রহ কমছে। ইস্যুভিত্তিক ভোট বাড়ছে। সবচেয়ে বড় ভূমিকান রাখবে প্রথমবারের ভোটাররা। এক তরুণ ভোটার বলেন, ‘এবার ভোট শুধু ভোট না, এটা আমাদের ভবিষ্যৎ ঠিক করার সুযোগ।’

তাই এখন দেখার পালা, তরুণদের ভোট কোন দিকে যায় বা সিলেট-১ আসনের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন কোনো সমীকরণ তৈরি হয় কি না।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!