জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ সোমবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করা হবে। এ রায় ঘোষণার আগে পূর্ণ ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রোববার নিজের ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত একটি বার্তা দেন তিনি। ওই পোস্টে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যেখানে গত বছরের ঢাকায় সংঘটিত প্রাণঘাতী সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা পূর্ণ ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতা দাবি জানাই।
এদিকে গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। চলছে নাশকতার অপচেষ্টাও। সবাই মিলে তা রুখে দিতে হবে। নির্বাচন ইস্যুতে তিনি বলেন, বিভ্রান্তি, হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও জাতীয় নির্বাচন হওয়ার একটি সম্ভাবনা এখন তৈরি হয়েছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চাইছে।
এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে একটি মহল বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করছে। গতকাল মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাবে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। বক্তারা সভায় মওলানা ভাসানীর বর্ণাঢ্য ও আপসহীন রাজনৈতিক জীবনী তুলে ধরেন।
আলোচনা সভায় অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মওলানা ভাসানীর সাহচর্যের কথা। এ সময় বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন পেছাতে কিছু কিছু লোক নতুন নতুন দাবি-দাওয়া সামনে নিয়ে আসছে। তারা যেভাবেই হোক নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা আরও ‘বিভ্রান্তিকর’ অবস্থায় চলে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এই দেশের মানুষের এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো একটা নির্বাচিত সরকার, যার পেছনে জনগণ থাকবে। কালবিলম্ব না করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। দেশের অর্থনীতির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার না থাকলে অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, আজ ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যার রায়কে কেন্দ্র করে একটা মহল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা করছে। রাজনৈতিক বিভাজন ও অস্থিরতার সুযোগে একটি গোষ্ঠী দেশে নৈরাজ্য তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তাই নির্বাচনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি।
আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের বিষয়টি সরকার যত বলিষ্ঠতার সঙ্গে ঘোষণা করুক না কেন, পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে একটা কালো মেঘ ও কালো ছায়া দেখা যায়। এই নির্বাচন যদি সময়মতো অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে দেশের জন্য বিরাট বিপর্যয়, বিরাট সংকটের সৃষ্টি হবে বলে তার ধারণা। গণভোটের চারটি প্রশ্ন জনগণের কাছে কতটা বোধগম্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, গণভোট ও নির্বাচন একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু শঙ্কা জাগে, গণভোটের চারটি প্রশ্ন জনগণের কাছে কতটা বোধগম্য হবে। জনগণ কতটা তা বুঝতে পারবে। এই ব্যাপারে তার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, এখনো বাংলাদেশের বিরাটসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে বলা যায় নিরক্ষর। তারা কীভাবে এই চার জটিল প্রশ্নের আলোকে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তাই আজ যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক একতা, যারা দেশকে ভালোবাসে, তাদের একতা। অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে দূরত্ব এই জুলাইয়ের শক্তিগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে, তা কমাতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য একাট্টা হতে হবে। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র না থাকলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না।
গণতন্ত্রের পথে কোনোরকম বাধা সৃষ্টি এই দেশের জনগণ একেবারেই সহ্য করবে না বলে মন্তব্য করেন মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। সেই নির্বাচনগুলো করার জন্য শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। তাই এখানে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামেও গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। গণতন্ত্রের পথে কোনোরকম বাধা সৃষ্টি করা এই দেশের জনগণ একেবারেই সহ্য করবে না। কাজেই যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়, স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এর পথে যাতে কোনোরকম বাধা-বিপত্তি না থাকে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মাহবুব উল্লাহ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান, তিনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা যাতে সার্থক হয়। সেই ঘোষণা মোতাবেক যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান। বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন