*** বন্ধ খেলাধুলা, ক্ষুব্ধ স্থানীয় ক্রীড়াবিদ ও খেলোয়াড়রা
*** মাঠের পূর্বের রূপ ফিরিয়ে আনতে ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের প্রায় শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী ফুটবল মাঠটি এখন আর কেবল খেলাধুলার উচ্ছ্বাসে মুখর থাকে না। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে প্রতি সপ্তাহে গরু-ছাগলের হাট বসায় মাঠটির ক্রীড়া পরিবেশ ধ্বংসের মুখে। মাঠের পূর্বের রূপ ফিরিয়ে আনতে সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়েরা সম্প্রতি গণস্বাক্ষরসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও খেলোয়াড়দের সূত্রে জানা যায়, ১৯২৫ সালে সুনামগঞ্জ থেকে আগত ধর্মপ্রচারক সাঙ্গীন সাংমা গারো তরুণদের ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তার উদ্যোগে স্থানীয় দাতা পরদ চন্দ্র দিও প্রায় ২ একর ৭০ শতক জমি জনকল্যাণের জন্য দেন, যার ওপর গড়ে ওঠে কাকরকান্দি ফুটবল মাঠ। এই মাঠকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে গারো খেলোয়াড়দের প্রথম সংগঠন ‘কচ্ছপ ক্লাব’।
স্বাধীনতার পর মাঠের পাশে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্থাপিত হয় একটি ক্লাব। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্ট, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের খেলাধুলা ও মেলাÑ সবই এই মাঠকে ঘিরে জমে উঠত। প্রতিদিন স্থানীয় তরুণরা অনুশীলন করতেন মাঠে।
কিন্তু ২০০২ সাল থেকে মাঠে সাপ্তাহিক গরুর হাট বসতে শুরু করলে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। গরুর বিষ্ঠা, খুঁটি পোঁতা ও বর্জ্যে মাঠের বিভিন্ন স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে মাঠটি খেলাহীন ও অনুপযোগী হয়ে পড়ায় হতাশ তরুণরা মাঠে যাতায়াত কমিয়ে দেন।
স্থানীয় সাবেক ফুটবলার মো. পনির বলেন, ‘হাট বসার কারণে মাঠ পুরো নোংরা হয়ে গেছে। ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় মাঠে খেলার পরিবেশ থাকে না। আমরা মাঠ দখলমুক্ত করতে ইউএনও স্যারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
জমিদাতা পরদ চন্দ্র দিওয়ের ছেলে ও প্রবীণ ফুটবলার পিযুষ চন্দ্র দিও বলেন, ‘এটা শুধু একটি মাঠ নয়, আমাদের ইতিহাসের অংশ। জনকল্যাণের জন্য বাবা জমি দিয়েছিলেন। এখন মাঠের এমন অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হয়।’
হাটের ইজারাদার মো. ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে এখানে হাট বসছে। এ বছর ৪৮ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন চাইলে আমরা হাট সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করব। আমরাও চাই মাঠে আবার খেলাধুলা হোক।’ কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়ামুল কাওসার জানান, ইউএনওর নির্দেশ পেয়ে দ্রুত ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলে হাট স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাজারসংলগ্ন একটি সরকারি জমি নতুন হাটের জন্য বিবেচনায় রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘মাঠে খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন