রাজনৈতিক ডামাডোলে অর্থনৈতিক স্থবিরতায় গত অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আদায়ে যে ভাটা দেখা গিয়েছিল, তা সামলে ওঠার আভাস দেখা গেছে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাময়িক পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর প্রান্তিকে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৪.২ শতাংশ। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ১১১ কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্যমতে, অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায় ৩৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে আদায় ৪৬ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা, আর আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৩২ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে মূসকে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুলাইয়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ১১১ কোটি টাকা। কিন্তু জুলাইয়ে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। পরের মাসে লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৮ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। ফলে ২ হাজার ৩২২ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে রাজস্ব আদায় কমেছে দুই দশমিক সাত শতাংশ। আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৪৮ কোটি টাকা কম।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। তবে বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি গত ১০ নভেম্বর চার হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে এনবিআরের নতুন রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ তিন হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে। লক্ষ্যপূরণে অর্থবছরের বাকি আট মাসে এনবিআরকে আদায় করতে হবে তিন লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের কর্মকর্তা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতি থাকায় রাজস্ব আদায় তুলনামূলক কম হয়েছে। তবে বছরের শেষদিকে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়বে বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, করের আওতা বৃদ্ধি, কর পরিপালন নিশ্চিতকরণ, কর ফাঁকি প্রতিরোধ ও ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পুনরুদ্ধার করার কাজ করছে এনবিআর।
এনবিআর বলছে, করের আওতা বৃদ্ধি, কর পরিপালন নিশ্চিতকরণ, কর ফাঁকি প্রতিরোধ এবং ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পুনরুদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমাদানের কাজে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মেধাবী এবং পরিশ্রমী কর্মীগণ তাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির এ ধারাকে আরও বেগবান করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ জন্য বহুজাতিক সংস্থাটির আরোপিত নানা ধরনের শর্ত মানতে হচ্ছে। এই শর্ত থেকে রাজস্ব খাতও বাদ যায়নি। সে অনুযায়ী, এই খাতে বড় দুটি শর্ত হলো প্রতিবছর জিডিপির দেড় শতাংশ পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে ও ২০২৭ সালের মধ্যে সব ধরনের করছাড় তুলে দিতে হবে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কৌশল ঠিক করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন