বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ০১:৪০ এএম

সম্পাদকীয়

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড রাজনীতিবিদদের জন্য দৃষ্টান্ত

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ০১:৪০ এএম

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড রাজনীতিবিদদের জন্য দৃষ্টান্ত

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদ-াদেশ দেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মোড় এনে দিয়েছে। দীর্ঘ দেড় দশক দেশ শাসন করা ক্ষমতাবান দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ শুধু বিচার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদদের জন্য স্পষ্ট বার্তা, ক্ষমতার আসনে বসলে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করলে তার জবাবদিহি অনিবার্য।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার, ভিন্নমত দমনে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ এবং গণ-অভ্যুত্থান দমনে বর্বর হামলার সিদ্ধান্ত ছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আদালতে যে মাত্রার সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার মান আন্তর্জাতিক পরিমাপকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ পাওয়া যায়। এ রায় তাই শুধু একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়, রাষ্ট্রে আইনের শাসন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের এক বড় পদক্ষেপ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ- পেলেন। যে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার করার জন্য, সেই আদালত থেকেই তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা এসেছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে, আইনের চাকা একসময় না একসময় ঘুরে দাঁড়ায়, এবং অপরাধের ভার থেকে ক্ষমতাবানরাও মুক্ত থাকতে পারেন না। যে রাষ্ট্রে ১৪০০ তরতাজা যুবক দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জীবন দিয়েছে, সেখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি টিকতে পারে না। এ রায় সেই সত্যটিই নতুন করে নিশ্চিত করেছে।

এই রায় ঘোষণার পর দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষত শহিদ ও আহত পরিবারের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে বহু বছরের বঞ্চনা ও দমন-পীড়নের পরে জনগণ ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছিল। ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী শেখ হাসিনা ও কামালের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে শহিদ পরিবার ও আহতদের সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এই সিদ্ধান্ত ক্ষমতার অপব্যবহারের অর্থনৈতিক দিকটিও সামনে এনেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বা ব্যক্তিগত সম্পদ কোনো কিছুই অপরাধ ঢাকতে পারে না।

মোটা দাগে এ রায়ের একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। তা হলো, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন, ভিন্নমতকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা, নিরাপত্তা বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণের কণ্ঠ দমন এসব কোনোভাবেই রাজনীতির বৈধ অংশ হতে পারে না। যে ধরনের ‘অবিচ্ছিন্ন ক্ষমতার নিশ্চয়তা’ অনেক নেতাকে ভুল পথে ঠেলে দেয়, এ রায় সেই অহঙ্কার ও দ-মুক্তির সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

একই সঙ্গে রায়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, রাজসাক্ষী হিসেবে সাবেক আইজিপির স্বীকারোক্তি। এটি দেখায় যে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরের লোকেরাও আর রাজনৈতিক শোষণের দায় বহন করতে আগ্রহী নন। তারা নিজেদের রক্ষা করতে সত্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। এর অর্থ অবৈধ রাজনৈতিক নির্দেশ মানা বা তার অংশ হওয়া ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও বিরাট ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। রাজনীতির ওপর প্রশাসনিক নির্ভরতা বা প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণÑ দুটিই এখন নতুনভাবে ভাবার সময় এসেছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই রায়কে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছে, তা বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুন মাত্রায় তুলে ধরেছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ বার্তা পাঠিয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার যতটাই প্রাতিষ্ঠানিক হোক, জনগণের আন্দোলন ও বিচারিক প্রক্রিয়া মিললে দ-নীয় অপরাধকে কখনোই আড়াল করা যায় না। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে যেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার প্রায় স্বাভাবিক রূপ পেয়েছে, সেখানে এ রায় নতুন দৃষ্টান্ত হতে পারে।

এ রায় উৎসব বা প্রতিহিংসার নয়। এটি একটি রাষ্ট্রের পুনর্জন্মের রায়। এটি দেখিয়েছে, আইন যদি নিঃস্বার্থভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। একদলীয় শাসন, পুলিশি দমন, দুর্নীতি, স্বৈরতন্ত্র এসব কোনো কিছুরই ভবিষ্যৎ নেই একটি সচেতন জনগণের সামনে। রাজনীতিবিদদের মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা জনগণের, নেতৃত্ব দায়বদ্ধতার, আর অপব্যবহারের পরিণতি একদিন না একদিন ফিরে আসে। এ রায় সেই পরিণতির সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত।

আমরা মনে করি,  শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদ- কেবল এক ঐতিহাসিক বিচার নয়, এটি ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদদের জন্য এক সতর্কবার্তা। এ রায় তাদের মনে করাবে  জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে, রাষ্ট্রীয় শক্তি অপব্যবহার করলে, আর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করলে ক্ষমতার চেয়ার তাকে রক্ষা করতে পারবে না। অপরাধ করলে তার শাস্তি  তাকে পেতেই হবে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!