‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছ’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়’, একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’সহ অসংখ্যা কালজয়ী গানের নন্দিত সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। দেশের কিংবদন্তি এই শিল্পীর জন্মদিন আজ। বিশেষ এই দিনে শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করছেন তার ভক্ত ও সহকর্মীরা।
১৯৫৩ সালের আজকের হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার নন্দীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুবীর নন্দী। তার ডাক নাম বাচ্চু। এ নামটি অবশ্য সাধারণ মানুষ জানে না। সবার কাছে তিনি সুবীর নন্দী নামেই পরিচিত।
চার দশকের বেশি সময়ে অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন প্রয়াত এই গায়ক। সুবীর নন্দী কিডনি ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ মে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।
মায়ের কাছেই তার শৈশবে সংগীতের হাতেখড়ি হয়। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরিও করেন সুবীর নন্দী। তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ বাজারে আসে ১৯৮১ সালে। তবে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আবদুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে।
আধুনিক সংগীতের পাশাপাশি তিনি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন শাস্ত্রীয় সংগীত, ভজন, কীর্তন এবং পল্লী গীতিতেও। নিজের ভালোলাগার নজরুলসংগীতেও আবেশ ছড়িয়েছেন সুবীর নন্দী। দীর্ঘ পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে এই কিংবদন্তি গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সুবীর নন্দী অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও তিনবার বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন সুবীর নন্দী।
বরেণ্য এই শিল্পী চলে গেছেন পৃথিবীর চিরায়ত নিয়মে। তবে যা রেখে গেছেন, তা অনন্তকালের সংগীতপ্রেমীদের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে। একান্তে প্রেম-ভালোবাসার প্রিয় অনুভবে হারিয়ে যাওয়ার জন্য আরও কয়েক শতাব্দী পরেও মানুষ কান পাতবে সুবীর নন্দীর গানে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন