রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা না বাড়তেই বেড়েছে সর্দি-জ্বরের রোগী। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছে বলে জানা গেছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই বয়স্ক ও শিশু। এই রোগের প্রভাব পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। অসুস্থতার কারণে স্কুলেও কমছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ রোগী আসছে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। বিশেষ করে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীরা আসছে বেশি। যাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৪০০ শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগের ওষুধ বিতরণ করতে হচ্ছে বহির্বিভাগ থেকে।
রামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসাপাতালে গতকাল মঙ্গলবার যেসব রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন, তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। যাদের অধিকাংশই আবার জ্বর-সর্দিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ৫-১২ বছরের শিশুদের সংখ্যা বেশি।
হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মহানগরী কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার শিশু ইমরান আলীর মা বলেন, ‘তিন-চার দিন ইমরান জ্বরে আক্রান্ত। জ্বরের কারণে স্কুলেও যেতে পারেনি। এলাকা থেকে কয়েক দফা ওষুধ কিনে নিয়ে খাওয়াইছি। তাতেও লাভ হয়নি। জ্বর যাচ্ছেই না। বাধ্য হয়ে আজকে (গতকাল) হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখাতে নিয়ে এসেছি। কয়েক দিন আগে মেয়েটিরও জ্বর এসেছিল। সে ভালো হতে না হতেই ছেলেটি আক্রান্ত হয়েছে।’
উপশহর এলাকার আরেক রোগীর স্বজন নুজহাত জাহান বলেন, ‘আমার দুই শিশুই জ্বরে আক্রান্ত। দেবরের এক শিশু আক্রান্ত হয়েছে। একজন ভালো হলে আরেকজনের হচ্ছে। সঙ্গে সর্দি-কাশিও আছে।’
বাগমারার ভটখালী এলাকার ৬৫ বছর বয়স্ক রোগী এরশাদ হোসেন বলেন, ‘গ্রামে প্রায় ১৫ দিন আগ থেকেই শীত পড়তে শুরু করেছে। ঠান্ডা পানিতে গোসল করার কারণে সর্দি-জ্বর আর কাশি হয়েছে। হঠাৎ করে শীত শুরু হওয়ার কারণেই মনে হয় এমনটি হয়েছে।’
বহির্বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রামেক হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগেই চিকিৎসা নিতে গড়ে প্রতিদিন ১৩০০ থেকে ১৫০০ রোগী আসে। তাদের মধ্যে এখন ৬০০-৭০০ রোগী আসছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে।
বহির্বিভাগের ডিসপেনসারির ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, ‘গড়ে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ শিশুদের জ্বরের সিরাপ বিতরণ করা হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তন ও শীতের কারণে শিশুদের সর্দি-জ্বর বেড়েছে।’
বড়বনগ্রাম সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা জানান, তাদের স্কুলে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে গড়ে প্রতিদিন ১০-১৫ জন করে স্কুলে আসছে না সর্দি-জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে। গত সোমবার শুধুমাত্র চতুর্থ শ্রেণিরই তিনজন শিক্ষার্থী জ্বরের কারণে স্কুলে যেতে পারেনি।
উপশহর স্যাটেলাইট সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিদিনই ১৫-২০ জন করে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকছে জ্বর-সর্দির কারণে। হঠাৎ করে ঠান্ডা শুরু হওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে।’
রামেকের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে সর্দি-জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। কয়েক দিন গেলে আবার এটি ঠিক হয়ে যাবে। যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। এ ধরনের রোগে দ্রুতই আরোগ্য লাভ করে রোগীরা। আমরা চেষ্টা করছি, রোগীদের ভালো চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন