গাজায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সেনা মোতায়েনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদন দেওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। অন্তর্বর্তী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গাজায় আধিপত্য বিস্তার করে উপত্যকাটিকে ফিলিস্তিন থেকে আলাদা করে ফেলবে বলে আশঙ্কা গাজাবাসীর। আর ফিলিস্তিনি সরকার মানলেও চাহিদার প্রতিফলন না থাকায় জাতিসংঘের অনুমোদিত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আগামী দুই বছর গাজা উপত্যকার ব্যবস্থাপনা দেখভাল করবে যে, ‘বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ’ সেখানে বিশে^র বড় দেশের প্রধানরা থাকবেন। বোর্ডটি এখনো গঠিত হয়নি। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার রাতে হোয়াইট হাউসে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, নৈশভোজে ট্রাম্প সৌদি যুবরাজকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমি আশা করি, মহামান্যও বোর্ডে থাকবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবাই বোর্ডে থাকতে চায়, আর শেষ পর্যন্ত এটি বেশ বড় একটি বোর্ড হবে। কারণ, এতে বিশ্বের সব প্রধান দেশের নেতা থাকবেন।’ ট্রাম্প এমন এক সময়ে এই মন্তব্য করলেন যার মাত্র একদিন আগেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বোর্ড অব পিসকে অন্তত দুই বছরের জন্য গাজা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব পাস করেছে। সে অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই বোর্ড অব পিস ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত গাজা পরিচালনা করবে।
গত মাসে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে সৌদি যুবরাজ যে ভূমিকা রেখেছেন, তার জন্য ট্রাম্প তাকে ধন্যবাদ জানান, যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘যদিও পরিস্থিতিটা কিছুটা অগোছালো দেখায় (গাজা), প্রায় নিখুঁত অবস্থার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।’ যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে জিম্মিদের ফেরত আনার বিষয়েও তিনি ঢালাওভাবে নিজের ভূমিকা তুলে ধরেন। তবে তিনি ভুল করে দাবি করে বলেন, হামাস এখন দুজন ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দেবে। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা আসলে তিন। ট্রাম্প বলেন, ‘হামাস অনেক কাজ করেছে, আর অনেকে ভেবেছিল তারা এ ধরনের কাজ করবে না।’ তিনি গাজার সাধারণ মানুষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গাজার জনগণকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা আবার ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তারা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি নিরাপত্তায় রয়েছে।’ বাস্তবে গাজার অধিকাংশ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষের বড় একটি অংশ এখনো তাঁবুতে বসবাস করছে।
টানা দুই বছরের ইসরায়েল আগ্রাসনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শুরু হয় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি। প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি অনুযায়ী প্রথম ধাপে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও একের পর এক সামরিক অভিযান ও বিমান হামলা চালিয়ে এসেছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছেÑ এমন অভিযোগ তুলে বারবার হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি সেনারা। পাল্টা অভিযোগ করেছে হামাসও।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগের সমাধান করতেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে, গাজায় আন্তর্জাতিক সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব রাখে যুদ্ধবিরতির প্রধান মধ্যস্থতাকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজায় বোর্ড অব পিস নামে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠন করা হবে। গাজাবাসীকে নিরাপত্তা দিতে অস্থায়ীভাবে মোতায়েন করা হবে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী, আইএসএফ।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন