শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:২৯ পিএম

উৎপত্তি মাধবদী হিসাবে গরমিল

মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:২৯ পিএম

উৎপত্তি মাধবদী  হিসাবে গরমিল

শুক্রবার সকালে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার মাঝারি ভূমিকম্প নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে দেশের তাবৎ বিশেষজ্ঞদের। বিশেষ করে রাজধানীর কাছে নরসিংদীর মাধবদীতে উৎপত্তিস্থল হওয়ার বিষয়টি সবার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের হিসাব-নিকাশের বিপরীতমুখী উৎপত্তিস্থল নিয়েও বাড়তি ভাবনা তৈরি করেছে। কারণ এত দিন সিলেটের ডাউকি ও টাঙ্গাইলের মধুপুরÑ এ দুটি চ্যুতি রেখাকে কেন্দ্র করে সবার ভাবনা আবর্তিত হচ্ছিল। কিন্তু মাধবদীর চ্যুতিরেখা যে একটু একটু করে পরিপক্ব হচ্ছিল, তা তাদের ধারণাতেই ছিল না।

এ বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় রূপালী বাংলাদেশের কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের, তবে বিশেষজ্ঞগণ মুখে না বললেও মাধবদীতে একটি চ্যুতিরেখা ছিলÑ এটি যে ভেতরে ভেতরে পরিপক্ব হচ্ছে, তা আমাদের নজরে ছিল না। তাই এটি নিয়ে আগে কোনো পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি।’ কথা প্রসঙ্গে তিনি আভাস দেন, এই ভূমিকম্প একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্পের আগাম বার্তা। ড. মেহেদী আরও বলেন, ‘এখন আমাদের বসে থাকার সময় নেই, সচেতনতার পাশাপাশি জোর প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে এখনই বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজউকের উচিত এ ব্যাপারে সচেতন করা। সেই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া। তা ছাড়া সরকারি যেসব সংস্থা ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করে, তাদের কাজকেও আরও বেগবান করা দরকার। মনে রাখতে হবে, এখন সময়ক্ষেপণ আমাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।’

এদিকে রাজউকের অধুনা বিলুপ্ত আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মধুপুরে উৎপত্তি হওয়া সম্ভাব্য বড় ভূমিকম্পের ফলে রাজধানী ঢাকায় কম করে হলেও ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯ থেকে ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫টি ভবন ধ্বসে বা ভেঙে পড়তে পারে। যদি উৎপত্তিস্থল সিলেটের ডাউকি হয়, তাহলে ১৪ হাজার ৭৪২টি থেকে ৪০ হাজার ৯৩৫টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর মধুপুরের ভূমিকম্প যদি দিনের বেলায় হয়, কম-বেশি ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ নিহত এবং আহত হতে পারে ২ লাখেরও বেশি। এর কারণ হিসেবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দিনের বেলায় অফিস-আদালত ও কলকারখানায় লোকসমাগম বেশি থাকায় এই বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

এরই মধ্যে দেশের স্বনামধন্য কাঠামো প্রকৗশলী অধ্যাপক এম শামসুজ্জামান বসুনিয়া গত ১ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ঢাকার প্রায় সব ভবনই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। দুঃখের বিষয়, ভূমিকম্প নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষই কম-বেশি উদাসীন। ভূমিকম্প নিয়ে তেমন একটা কাজ হয়নি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কেবল সমীক্ষা পরিচালনা করেই খালাস, এরা আর এগোয়নি। উল্টো এদের প্রকল্পই বন্ধ করে দিয়েছে।’

এদিকে ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থা অধিদপ্তর ছয় বছরব্যাপী প্রকল্প হাতে নিয়েছিল ২০২১ সালে। কিন্তু গুছিয়ে উঠতে না পারায় সম্প্রসারণ করে এর মেয়াদ নির্ধারিত হয় ২০২৭ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ করা হয় ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এসব তথ্য জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব কাজী শফিকুল আলম গত ১৪ অক্টোবর রূপালী বাংলাদেশের কাছে ভূমিকম্প সম্পর্কে তাদের প্রস্তুতির একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। তিনি জানান, দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা, সিলেট ও টাঙ্গাইলে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৭৮ হাজার সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার কাছে যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে, এর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যেখানে যে যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে, সেখানে তা পাঠানো হবে। এর জন্য এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও নৌবাহিনীকে এই প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফের কথা হয় এই কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ক্রয়কৃত ১০৩ ধরনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির তালিকা উপস্থাপন করেন।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র আভাস দিয়েছে, ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকার এরই মধ্যে ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’  প্রণয়ন করেছে। সূত্রের দাবি, এই কোড অনুসরণ করে ভবন নির্মাণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা গেলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কম হবে। তবে যেসব ভবন এরই মধ্যে কোনো নিয়মকানুন না মেনেই নির্মিত হয়েছে, সেসবের কী হবেÑ এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি কোনো পক্ষ থেকেই। সম্প্রতি চাউর হয়েছে, রাজউক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!