শীতকাল এলে বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়, আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের ঠোঁটে। শরীরের বাকি অংশে যেমন সেবেসিয়াস গ্ল্যান্ড থাকে, যা প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন করে ত্বককে আর্দ্র রাখে। কিন্তু ঠোঁটে সেই সুরক্ষা নেই। ফলে ঠোঁট দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং খসখসে হয়ে ওঠে। শীতের শুকনো বাতাস ঠোঁটের ওপরের স্তরকে আরও দুর্বল করে, ফলে সামান্য চাপেই তা ফেটে যায়। এর সঙ্গে আছে সূর্যের লুকানো ক্ষতি, শীতে ইউভি রশ্মি কম মনে হলেও তা ঠোঁটের নরম ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে, পিগমেন্টেশন সৃষ্টি করে। অনেকেই ঠোঁট শুকিয়ে গেলে জিহ্বা দিয়ে চাটতে থাকেন, কিন্তু লালার এনজাইম ঠোঁটের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা আরও কমিয়ে দেয়। ঘরে হিটার বা ব্লোয়ার ব্যবহার করলেও বাতাস শুকিয়ে যায়, ঠোঁটের আর্দ্রতা হ্রাস পায়। সব মিলিয়ে ঠোঁট হয়ে পড়ে টানটান, রুক্ষ ও ভঙ্গুরÑ ফলে সামান্য অবহেলায়ও তা ফেটে ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
আর্দ্র ঠোঁটের যত্ন
শীতে ঠোঁট সুস্থ রাখতে চাইলে প্রতিদিনের পরিচর্যা খুব জরুরি। দিনের শুরু এবং ঘুমানোর আগে অন্তত দুবার ভালো মানের লিপ বাম লাগানো উচিত। এমন লিপ বাম বেছে নিন যাতে শিয়া বাটার, কোকো বাটার, নারকেল তেল, বাদাম তেল, ভিটামিন ই বা হাইড্রেটিং ওয়াক্স থাকে। এগুলো ঠোঁটের ওপর সুরক্ষা স্তর তৈরি করে, আর্দ্রতা ধরে রাখে। ঠোঁট ফাটা শুরু হলে অনেকেই তা টেনে তুলে ফেলেনÑ এটি একেবারেই ক্ষতিকর। বরং নরম ব্রাশ বা ভেজা টাওয়েল দিয়ে ধীরে ধীরে মৃত ত্বক তুলে ফেলতে পারেন, সপ্তাহে ২-৩ বার হালকা স্ক্রাব করলেও ভালো। স্ক্রাব তৈরির সহজ উপায়Ñ চিনি ও মধুর মিশ্রণ কয়েক মিনিট ঠোঁটে মালিশ করে ধুয়ে ফেললে ঠোঁট নরম হবে। দিনে বাইরে বের হলে ঝচঋ যুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করা জরুরি, কারণ শীতের রোদ ঠোঁটের রং নষ্ট করে এবং কালচে দাগ তৈরি করতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে লিপ স্লিপ মাস্ক বা একটু ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে সারারাত আর্দ্রতা ধরে থাকে। পানির অভাব শরীরের মতো ঠোঁটেও প্রতিফলিত হয়, তাই শীতে পানি কম খাওয়ার অভ্যাস বদলানো দরকার।
গরম পানি, স্যুপ, লেবুপানি বা হার্বাল টি যেকোনো ভাবে হাইড্রেট থাকা ঠোঁটকে থাকবে নরম ও সজীব।
বদ অভ্যাসে ক্ষতিকর দিক
শীতকালে ঠোঁটের যতেœ কিছু ভুল অভ্যাস অসচেতনভাবেই আমাদের ক্ষতি করে। যেমনÑ ঠোঁট বারবার চাটা। এটি সাময়িক আরাম দিলেও লালার সংস্পর্শে ঠোঁট আরও শুকিয়ে যায়। অনেকেই লিপস্টিক লাগানোর আগে লিপ বাম ব্যবহার করেন না, এতে লিপস্টিকের রাসায়নিক উপাদান ঠোঁটকে আরও রুক্ষ করে তোলে। বিশেষ করে ম্যাট লিপস্টিক শীতে খুব শুষ্ক করে, তাই এর আগে অবশ্যই হাইড্রেটিং বেস ব্যবহার করতে হবে। ঠোঁট ফেটে গেলে টেনে তুলে ফেলা বা দাঁতে কামড়ে ছুলে ফেলা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে ক্ষত আরও গভীর হয়, ব্যথা বাড়ে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। অনেকে গরম পানি দিয়ে বারবার মুখ ধুয়ে নেন; এতে ঠোঁটের প্রাকৃতিক তেল দ্রুত কমে যায়। এমনকি যারা বেশি কফি বা চা খান, তাদের ঠোঁটও দ্রুত শুকিয়ে যেতে পারে, কারণ গরম বাষ্প ঠোঁটকে শুষ্ক করে। এ ছাড়া তিক্ত স্বাদের বা মেনথলযুক্ত লিপ বাম বারবার ব্যবহার করলে ঠোঁট আরও শুষ্ক হতে পারে, কারণ এতে অ্যালকোহল জাতীয় উপাদান থাকে। ঠোঁটের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই যে কোনো ক্ষতিকর রুটিন বা অভ্যাস এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ঘরোয়া যত্ন
ঠোঁট পরিচর্যায় ঘরোয়া উপায়গুলো খুব কার্যকর। মধু প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট, এটি ঠোঁটে আর্দ্রতা ধরে রাখে। রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য মধু লাগালে ঠোঁট নরম হয়। গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণও একটি জনপ্রিয় সমাধান, যা ঠোঁটের রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে। নারিকেল তেল দারুণ ময়েশ্চারাইজার-দুফোঁটা নারিকেল তেল দিয়ে হালকা মালিশ করলে ঠোঁট দ্রুত কোমল হয়। এ ছাড়া ভ্যাসলিন ঠোঁটের ওপর একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে, যা দীর্ঘসময় আর্দ্রতা ধরে রাখে। তবে প্রোডাক্ট বেছে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে উপাদানের দিকে। প্যারাবেন বা অতিরিক্ত সুগন্ধিযুক্ত লিপ বাম এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এগুলো ঠোঁটে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য বাটার-বেসড লিপ বাম, আর রাতে ব্যবহারের জন্য থিক লিপ স্লিপ মাস্ক সবচেয়ে ভালো কাজ করে। যাদের ঠোঁট কালচে হয়ে যায় তারা ভিটামিন সি বা লিকারিসযুক্ত লিপ মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। বাইরে বের হলে অন্তত ঝচঋ ১৫-৩০ যুক্ত লিপ বাম চাইই। আর যাদের ঠোঁট অতিরিক্ত সংবেদনশীল বা বারবার ফেটে যায়, তারা সপ্তাহে একদিন ঠোঁটের জন্য হাইড্রেটিং শিট মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁটের চারপাশে স্কিন পিল বা রেটিনয়েড ব্যবহার করলে শীতে তা আরও বেশি রুক্ষ হয়ে যায়, এই সময়ে এসব ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া ভালো।
লিপস্টিক ব্যবহারকারীদের জন্য পরামর্শ
শীতে ম্যাটের বদলে ক্রিমি বা হাইড্রেটিং লিপস্টিক ব্যবহার করা ভালো। বাইরে
যাওয়ার আগে লিপ বাম, লিপস্টিক, হালকা গ্লসের লেয়ার ব্যবহার করলে ঠোঁট দীর্ঘসময় আর্দ্র থাকে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন