ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে চলতি ডিসেম্বরের মাত্র ৪ দিনে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন আরও ৫৬৫ জন। এ সময়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩০।
চলতি বছরের শুরু থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৯৬ হাজার ৬২৭ জন। এর মধ্যে ৬২ দশমিক চার শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ছয় শতাংশ নারী রয়েছেন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৯৪ জনের। এমন পরিস্থিতি ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা ধ্বংসে প্রয়োজনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৫৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৭ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৬ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৮ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) চারজন, সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) পাঁচজন রয়েছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬৭ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ যাবত মোট ৯৪ হাজার ৪০৩ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তার প্লাটিলেট ৬০ হাজারের নিচে নেমে গেছে।
মগবাজারের অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুসন্তান ইয়াসির আরাফাতকে নিয়ে আতংকে দিন কাটছে লুবনা-ইশরাক দম্পত্তির। তারা জানান, প্রথম দিন জ¦র উঠার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু দিন দিন ছেলে দুর্বল হয়ে পড়ছে। প্লাটিলেট নেমেছে ৫০ হাজারের নিচে। প্লাটিলেট দেওয়া হয়েছে কয়েক দফায়। তারপরও কোনো উন্নতি দেখছি না।
এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের বিকল্প নেই উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার লেনিন চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘নভেম্বরজুড়ে আমরা ডেঙ্গুর তা-ব দেখেছি। ডিসেম্বরে মাত্র চার দিনের আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান নতুন করে আতংক জাগাচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে একটাই কাজ। সমন্বিতভাবে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা। সেটা ব্যক্তি পর্যায়েই হোক কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়। প্রয়োজনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে। নইলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২১৪ এবং ডেঙ্গুতে মোট ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়, পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন