শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:২৪ পিএম

বন্যপ্রাণী : ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:২৪ পিএম

বন্যপ্রাণী : ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ৫২ ও ২৪  ধারার ক্ষমতা বলে সরকার পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২০ প্রবর্তন করেছে। এই বিধিমালা অনুযায়ী পোষাপাখি অর্থ সেই সব আবদ্ধ পাখি যারা সাইটিস এপেন্ডিক্স ২ ও ৩ ভুক্ত বা বহির্র্ভুক্ত ও এদের মিউট্যান্টসমূহ যা আমদানি করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের আওতায় লালন-পালন, প্রজনন, ক্রয়-বিক্রয় ও রপ্তানি করা হয়।

আর পেট শপ বা পোষাপাখির দোকান বা বিক্রয় কেন্দ্র বলতে বুঝাবে যে স্থান হতে শৌখিন পোষাপাখি পালন-পালনকারী এক বা একাধিক পোষাপাখি ক্রয় করেন। শৌখিন পোষাপাখি লালন-পালনকারী অর্থ কোনো ব্যক্তি যিনি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষাপাখি লালন-পালন করেন না এবং যার নিকট কোনো প্রজাতির অনধিক ১০টি পাখি আছে।

বিধিমালা অনুযায়ী শৌখিনভাবে পোষাপাখি লালন-পালন ও খামার পরিচালনার কিছু শর্তাবলি আছে। যেমন শৌখিনভাবে এবং খামারে পোষাপাখি লালন পালনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক পোষা প্রজাতির বিধিমালায় নির্দিষ্ট পরিমাপ অনুযায়ী নির্ধারণ করবে। খামারে প্রত্যেক পোষাপাখি প্রজাতির খাঁচার মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার, খনিজ লবণ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও সুষম খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। খামারে প্রত্যেক পোষাপাখির এবং খামারকর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা নিশ্চিত করতে হবে। খামারে পোষাপাখির বাচ্চা জন্মাবার পর বাচ্চার পায়ে রিং পরাবার

পর রিং নম্বরসহ লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। পোষাপাখি কোনো অবস্থাতেই প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা যাবে না। মৃত পোষাপাখির দেহাবশেষ মাটি চাপা দিতে হবে এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত খামারিরা রেজিস্টার্ড ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বছরে এক বা একাধিক পোষাপাখি প্রদর্শন করতে পারবেন।

এছাড়াও খামারিকে লাইসেন্সের হালনাগাদকৃত তথ্য সংরক্ষণ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ অগ্রিম নোটিশ ব্যতিরেকে যেকোনো সময় খামার পরিদর্শন করলে তাকে সহযোগিতা করতে হবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে বা শেষ হওয়ার ৬০ দিন বা ক্ষেত্রমতে ৯০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। অন্যথায় তা বাতিল হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ঈওঞঊঝ-এর স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও সম্প্রতি অবৈধ পাখি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায়, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বন্যপ্রাণী আমদানি-রপ্তানি করায় বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ২২ নভেম্বর জেনেভায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এটা সত্যিই লজ্জাজনক। সাইটিসের পরিশিষ্ট ১ অনুযায়ী বিশ^ব্যাপী বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা এমন কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো শিক্ষা ও গবেষণার জন্য আমদানি করা যেতে পারে কিন্তু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়। পরিশিষ্ট ২-এ এমন উদ্ভিদ ও প্রাণী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেসব বিলুপ্তির হুমকির মধ্যে নেই তবে তাদের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। পরিশিষ্ট ৩-এ রাখা হয়েছে এমন সব প্রজাতি যা টেকসই পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশ বিক্রির উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গ্রেট সবুজ ম্যাকাও, নীল গলা ম্যাকাও, সামরিক ম্যাকাও, লাল মুকুট পেরাকীট, গোল্ডেন পেরাকীট আমদানি করেছে।

বাংলাদেশে নিবন্ধিত মোট ৮২টি খামার রয়েছে। এরা বিধিমালা অনুযায়ী পোষাপাখির ব্যবসা করতে পারে।             

পোষাপাখির লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনাবেচা, ও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হয়। এই লাইসেন্স না নিলে এক বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দ-ে দ-িত হতে পারে। লাইসেন্স পাওয়ার পর তাকে পজেশন সার্টিফিকেট নিতে হবে । এছাড়া কোনো পাখি নিজ মালিকানায় বা দখলে নিতে পারবেন না। প্রতিটি পাখির পজেশন সার্টিফিকেটের জন্য বার্ষিক ফিও দিতে হবে। প্রতি বছর এটি নবায়ন করতে হবে। লাইসেন্স বাতিল হলে পজেশন সার্টিফিকেটও বাতিল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে পোষাপাখির খামারির ১০ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স করতে হবে। পেট শপের ক্ষেত্রে লাইসেন্স ও প্রসেস ফি লাগবে ৫০০ টাকা। বছরে পজেশন ফি দিতে হবে ২ হাজার টাকা।

সম্প্রতি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় পোষাপাখির দোকান মালিকদের জরুরিভিত্তিতে পোষা পাখির দোকান স্থাপন ও পরিচালনাকারীদের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে পোষাপাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২০-এর বিধি ৪ মোতাবেক লাইসেন্স ছাড়া কোনো খামারি পোষা পাখির উৎপাদন, লালন-পালন, ক্রয়-বিক্রয় বা আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে না। ১৪ আগস্ট বন অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা রাজধানীর কাঁটাবনের পাখি মার্কেটের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা।

এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে পোষা পাখি লালন-পালন, ক্রয়-বিক্রয়ও একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২০ নিয়ে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের কিছু বক্তব্য রয়েছে। পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২০ গেজেট হিসেবে প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালে ১৩ জানুয়ারি। সে সময় অবশ্য এই গেজেটের বাতিল দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করে এক্সোটিক বার্ড ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, এভিয়ান কমিউনিটি ও এভিকালচার সোসাইটি অব বাংলাদেশ। তারা কী ধরনের সমস্যায় পড়ছে সেসব বিষয়ও আমাদের নজরে রাখতে হবে।

এছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন রিসোর্ট, পার্ক বা মিনি চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী অবৈধভাবে আটকে রাখার অভিযোগও রয়েছে। বাংলাদেশে হাতি, হরিণ, কুমির ও ময়ূর এই চারটি প্রাণী পালন করার অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে। এই চারটি ছাড়া অন্য কোনো বন্যপ্রাণী পালন করলে অবৈধ হবে। হরিণ পালন করা যাবে। তবে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে হরিণ পালন করা যাবে না। হরিণ ও হাতি পালনের ক্ষেত্রেও লাইসেন্স লাগবে। হরিণ ও হাতি পালন বিধিমালা ২০১৭ অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া হরিণ ও হাতি পালন করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। এক্ষেত্রে এক বছরের কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- গুনতে হবে। তবে সিটি করপোরেশনের জন্য লাইসেন্স ফি ২০ হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। হরিণ বা হাতির সংখ্যা বেড়ে গেলে ও বিক্রি করতে চাইলেও বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নিয়ে এসব প্রাণী বিক্রিও করা যাবে। ব্যক্তিগতভাবে বা খামারে বন্য প্রাণী লালন-পালনের ক্ষেত্রেও আমাদের নজর দেওয়া প্রয়োজন বটে।

 লেখক : পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য গবেষক

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!