মিয়ানমারে বিরল খনিজ সম্পদের বিশাল ভা-ার। তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে চলছে আলোচনা। উদ্দেশ্য এই সম্পদ চীনের বদলে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নিয়ন্ত্রণে আনা। আলোচনার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চল ঘিরে মার্কিন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। চার ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে এমনটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাতে এক বিশেষ প্রতিবেদনে রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের বিপুল পরিমাণ বিরল খনিজ চীনের বদলে যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ নিশ্চিতে ট্রাম্প প্রশাসনে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। এই খনিজগুলো যুদ্ধবিমানসহ আধুনিক অস্ত্র তৈরিতে অপরিহার্য। বর্তমান বিশ্বে এসব বিরল খনিজের ৯০% প্রক্রিয়াকরণ চীনেই হয়। রয়টার্স জানিয়েছে, বর্তমানে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের কাচিন রাজ্যে বিরল খনিজের বৃহৎ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ), যারা একটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সে কারণে মিয়ানমার নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিয়ে মার্কিন প্রশাসনে দুটি প্রধান প্রস্তাব আলোচিত হয়েছে। একটি হলো দেশটির সামরিক জান্তার সহযোগিতায় কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) সঙ্গে শান্তিচুক্তি; আরেকটি হলো জান্তাকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাজ করা। এ ধরনের আলোচনা দীর্ঘদিনের মার্কিন নীতির বিপরীত, কারণ ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলছে এবং তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে কিছু নিষেধাজ্ঞা সাম্প্রতিক সময়ে শিথিল করা হয়েছে।
বিরল খনিজ হলো ১৭টি ধাতব উপাদান, যা উচ্চ-প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে ভারী বিরল খনিজগুলো যুদ্ধবিমান ও উন্নত প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব উৎপাদন খুব সীমিত হওয়ায়, তাদের নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। চীন বর্তমানে এই খনিজ প্রক্রিয়াকরণের ৯০% নিয়ন্ত্রণ করে। রয়টার্স বলছে, এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে মিয়ানমার থেকে সরাসরি বা ভারতের মাধ্যমে এই খনিজ আমদানি করে চীনের নির্ভরতা কমাতে। প্রস্তাবকারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন মার্কিন ব্যবসায়ী লবিস্ট, সুচি সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং কাচিন আর্মির সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত কিছু বিশেষজ্ঞ। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের অফিসে গত ১৭ জুলাই এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাডাম কাস্তিলো, যিনি মিয়ানমারের আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রধান এবং দেশটিতে একটি সিকিউরিটি এজেন্সির মালিক। কাস্তিলো যুক্তরাষ্ট্রকে কাচিন অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন এবং বলেন, বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন আর্মি চীনের দ্বারা শোষণের শিকার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, কাচিন অঞ্চলের খনিজ সম্পদের খনিগুলো পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় অবস্থিত এবং সেগুলো ভারতে স্থানান্তর করা কঠিন হতে পারে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন। এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমনমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দখলকৃত এলাকাগুলোয় রোহিঙ্গাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে এই গোষ্ঠী। চলাফেরায় বিধি-নিষেধ, লুটপাট, খেয়ালখুশিমতো আটক, মারধর, জোরপূর্বক শ্রম ও শিশুদের নিয়োগ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, ‘রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে ধরনের নিপীড়ন চালিয়েছে, আরাকান আর্মিও এখন সেই পথেই চলছে। এসব আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।’ ২০২৩ সালের নভেম্বরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে নতুন করে সংঘর্ষে জড়ানোর পর আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আসে উত্তর রাখাইনের বহু এলাকা। সে সময় তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সব জাতিগোষ্ঠীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
কিন্তু বাস্তবে রোহিঙ্গারা বলছেন, তাদের ওপর চলছে বৈষম্যমূলক ও কঠোর শাসন। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে বুথিডং থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে এইচআরডব্লিউ।
আপনার মতামত লিখুন :