রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধ উত্তেজনার পারদ বাড়ছে। যা থেকে এখন পারমাণবিক সাবমেরিন লড়াইয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পকে নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের অধীনে থাকা দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের উসকানিমূলক মন্তব্যেই মূলত থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের দেওয়া শর্ত ও আলটিমেটাম সব কিছুকে উপেক্ষা করে সম্প্রতি কটাক্ষ করে যাচ্ছেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মেদভেদেভ। আশির দশকে গড়ে তোলা প্রতিশোধমূলক স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থা ডেড হ্যান্ড কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্পের সচেতন থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন নিরাপত্তার স্বার্থে রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প।
পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থা ডেড হ্যান্ডের হুমকিতেই ক্ষান্ত ছিল না রাশিয়া। ২৩ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগর, ব্যারেন্স সাগর ও বাল্টিক সাগরের জলরাশিতে একাধাওে অপারেশন জুলাই স্টর্ম নামে এক বিশাল নৌমহড়া চালিয়েছে তাদের নৌবাহিনী। এতে অংশ নিয়েছিল অত্যাধুনিক সাবমেরিনসহ ১৫০টির বেশি যুদ্ধজাহাজ, ১৫ হাজার সামরিক সদস্য এবং ১২০টির বেশি সামরিক বিমান। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে চালানো ওই মহড়া চলাকালীন, ২৪ জুলাই কনিয়াজ পোজারস্কি নামে নতুন একটি পারমাণবিক সাবমেরিনের উদ্বোধন করেছেন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের মতে, এটি চতুর্থ প্রজন্মের একটি পারমাণবিক সাবমেরিন। যা একটি আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং টর্পেডো অস্ত্রব্যবস্থা, নেভিগেশন সিস্টেম, রেডিও-টেকনিক্যাল এবং হাইড্রোঅ্যাকোস্টিক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরকে নিয়ে একাধিক আক্রমণাত্মক মন্তব্যে জড়িয়ে পড়েছেন। বর্তমানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের প্রশাসনের অধীন দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মেদভেদেভ আগের দিন সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘কল্পিত ডেড হ্যান্ড কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্পের সচেতন থাকা উচিত।’ মূলত রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন ট্রাম্পকে। শত্রুর নজর এড়িয়ে গোপনে চলাফেরা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে নির্ভুলভাবে পারমাণবিক ওয়ারহেড ফেলার জন্য মার্কিন নৌবাহিনীর ওহাইও-শ্রেণির এ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলোর (এসএসবিএন) সুখ্যাতি আছে। বুমার নামে পরিচিত এমন ১৪টি সাবমেরিন সক্রিয় রয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে টহল দেওয়ার উদ্দেশ্যে বানানো এই নৌযানগুলো বড় ধরনের মেরামত ছাড়াই ১৫ বছর চলতে পারে। এগুলো ২০টি পর্যন্ত সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এসএলবিএম) বহনে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের বহরে তিনটি সিওল্ফ-শ্রেণির সাবমেরিন আছে, যার প্রথমটি জলে নামানো হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। কিন্তু এ ধরনের সাবমেরিনে ওপরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ব্যবস্থা নেই। এই এসএসএনে ৮টি টর্পেডো টিউব থাকে, এর টর্পেডো ঘরে ৫০টি পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র রাখা যায়। সিক্স হানড্রেড এইটি এইট-শ্রেণির নৌযানগুলো মার্কিন সাবমেরিন বহরের মেরুদ-। এখনো এ ধরনের অন্তত ২৪টি আক্রমণাত্মক সাবমেরিন সচল রয়েছে। সোভিয়েত হুমকি মোকাবিলায় ১৯৭৬ সালে প্রথম বানানো এই সাবমেরিনগুলো গতি এবং গোপনে চলাফেরা করার দিক থেকে বেশ দক্ষ। এই লস অ্যাঞ্জেলেস শ্রেণির সাবমেরিনগুলো অবসরে গেলে তার জায়গায় ভার্জিনিয়া-শ্রেণির সাবমেরিন মোতায়েন হবে। রাশিয়ার কাছে আছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সাবমেরিন বহর, যেখানে নৌযান ৬৪টির মতো। এর মধ্যে ১৪টিই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন (এসএসবিএন), এগুলোই মস্কোর প্রতিরক্ষা কৌশলের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এই এসএসবিএনের মধ্যে দুই শ্রেণির নৌযান আছে, বোয়েরি-শ্রেণি ও ডেল্টা ফোর-শ্রেণির। রুশ নৌবাহিনীর কাছে ৮টি বোয়েরি শ্রেণির সাবমেরিন আছে, যেগুলোর প্রত্যেকটিতে ১৬টি বুলাভা এসএলবিএম ও ৬টি ফাইভ হানড্রেড থার্টি থ্রি মিলিমিটার টর্পেডো লঞ্চার থাকে। এগুলো সাবমেরিন-বিধ্বংসী রকেট ও সাবমেরিনের তলদেশে মাইনও ছুড়তে পারে। এতে শতাধিক নাবিক থাকে। এর বাইরে রাশিয়ার অন্তত ৬টি ডেল্টা ফোর-শ্রেণির সাবমেরিন রয়েছে, যেগুলো টাইফুন-শ্রেণির পাশাপাশি বানানো হয়েছিল। এগুলোতে ১৬টি সিনেভা এসএলবিএম থাকে। সাগরে রুশ পারমাণবিক প্রতিরক্ষার মেরুদ-ের ভূমিকা পালন করে এই সাবমেরিনগুলো।