গাজা সিটি দখলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। অনলাইন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস প্রথম এ তথ্য প্রকাশ করে। অ্যাক্সিওসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গাজা শহর দখলের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে এবং একই সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরের জনগণকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে এক সিনিয়র ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে জানানো হয়েছে, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে গাজা শহর থেকে সব ফিলিস্তিনিকে কেন্দ্রীয় শিবির ও অন্যান্য এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর শহরে থাকা হামাস যোদ্ধাদের অবরুদ্ধ করে স্থল অভিযান চালানো হবে।
এদিকে ওয়াশিংটন থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক শিহাব রাটটানসি জানান, গাজা দখলের এই পদক্ষেপের ইঙ্গিত গত কয়েক দিন ধরেই মিলছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে কার্যত সবুজসংকেত দিয়েছেন।
এর আগের দিন ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। তবে তারা সেখানে সরকার গঠন করতে চায় না, বরং নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলে তা কোনো তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলে দিতে চায়। গত সপ্তাহেই ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, গাজা দখলের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে এবং শিগগিরই নেতানিয়াহু তা ঘোষণা করবেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা নিয়ে চীন শুক্রবার ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে ও তাৎক্ষণিকভাবে ‘বিপজ্জনক কার্যক্রম বন্ধ করার’ জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এএফপিকে পাঠানো বার্তায় বলেন, ‘গাজা ফিলিস্তিনি জনগণের ও এটি ফিলিস্তিনি ভূখ-ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজার মানবিক সংকট নিরসন ও জিম্মিদের মুক্তির সঠিক উপায় হচ্ছে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি। গাজা সংঘাতের পূর্ণ সমাধান যুদ্ধবিরতির ওপর নির্ভর করছে। একমাত্র এতেই উত্তেজনা প্রশমনের পথ তৈরি হবে ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’
বেইজিং শুক্রবার আরও জানিয়েছে, গাজায় লড়াই যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের ফলে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় ৬১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রয়েছে ক্রীড়াবিদও। গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা এবং দুর্ভিক্ষে অন্তত ৮০০-র বেশি ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদ মারা গেছেন। দেশটির ফুটবল সংস্থার মতে, নিহত ৮০৮ জনের মধ্যে অন্তত ৪২১ জন দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের ফুটবল খেলোয়াড়। সর্বশেষ বুধবার খাবারের সন্ধানে ত্রাণকেন্দ্রে গিয়ে দেশটির জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় সুলেইমান আল ওবায়দ নিহত হন। সুলেইমান আল ওবায়দ ফিলিস্তিন জাতীয় দলের হয়ে ২৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। ফিফা স্বীকৃত এসব ম্যাচে সুলেইমান ফিলিস্তিনের হয়ে দুই গোল করেন।
তাকে এ যাবৎকালের ফিলিস্তিনের সবচেয়ে প্রতিভাবান ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেকে সুলেইমান আল ওবায়দের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য তাকে ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ হিসেবে অভিহিত করেন। ইসরায়েলি হামলায় দেশটির ৯০ শতাংশ ক্রীড়া অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। মারা গেছে দেশটির ক্রীড়াবিদ, রেফারি এবং কোচসহ ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট অনেকেই। ফিলিস্তিন ফুটবল সংস্থার মতে, ইসরায়েলি বোমায় দেশটির কমপক্ষে ২৮৮ ক্রীড়া অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর অন্তত অর্ধেকেই দেশটির ফুটবলসংশ্লিষ্ট বলে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় ফুটবল সংস্থা। এ ছাড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর ২৬৮টি গাজায় এবং ২০টি পশ্চিম তীরের বলে জানা গেছে। হামলার পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে ফিলিস্তিনের খেলাধুলার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানায় সংস্থাটি।
আপনার মতামত লিখুন :