রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার জেরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রপ্তানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের কৃষক, দুগ্ধ খাত এবং মৎস্যজীবীদের স্বার্থে তিনি কোনো রকম আপস করবেন না।
শুল্ক কার্যকর হতে বাকি মাত্র ২০ দিন, এই অল্প সময়ের মধ্যে ভারতকে কঠিন কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে- ছাড় দেবে, নাকি নিজের অবস্থানে অনড় থেকে পাল্টা পদক্ষেপে যাবে। পরিস্থিতি ক্রমেই একটি সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়তে পারে ভারতের অর্থনীতি, রপ্তানি খাত এবং বৈশ্বিক অবস্থানের ওপর। এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে চলমান শুল্ক বিরোধ মীমাংসিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের বাণিজ্য আলোচনা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি তার প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। ওভাল অফিসে এএনআই-এর এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, এটি (বাণিজ্য আলোচনা) হবে না, যতক্ষণ না বিষয়টি মীমাংসিত হয়।’
এর আগে এক নির্বাহী আদেশ জারি করে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে হোয়াইট হাউস। এতে ভারতের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানিকে কেন্দ্র করে জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির ঝুঁকি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসের মতে, রাশিয়া থেকে সরাসরি বা মধ্যস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আমদানীকৃত জ্বালানিপণ্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অস্বাভাবিক ও চরম ঝুঁকি’ তৈরি করছে, যা জরুরি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণকে ন্যায্যতা দেয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের ধার্ষ প্রথম ধাপের ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে ৭ আগস্ট থেকে। আর বর্ধিত শুল্ক ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে। তবে চলমান পরিবহন ও নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ক্যাটাগরি এই সিদ্ধান্তের আওতার বাইরে থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও পাল্টা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কৃষক, জেলে ও দুগ্ধ খাতের স্বার্থে কোনো আপস হবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে কৃষকদের স্বার্থই আগে। এর জন্য যদি মূল্য চুকাতেও হয়, আমরা প্রস্তুত। ভারত প্রস্তুত।’
অন্যদিকে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেওয়া শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কটাক্ষ করেছেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত সু ফেইহং। বৃহস্পতিবার এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘গু-াকে এক ইঞ্চি ছাড় দাও, সে এক মাইল নিয়ে নেবে।’ ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে মন্তব্যের সঙ্গে পোস্টে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র একটি মন্তব্যও জুড়ে দিয়েছেন তিনি। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভার প্রধান উপদেষ্টা সেলসো আমোরিমের সঙ্গে বুধবারের ফোনালাপে করা ওই মন্তব্যে ওয়াং ই বলেছিলেন, ‘অন্য দেশকে দমনে শুল্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন, ডব্লিউটিওর নিয়ম ভঙ্গ করে, এটি অজনপ্রিয় এবং মোটেই টেকসই নয়।’
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর ট্রাম্পের দলের সঙ্গে যেসব দেশ প্রথমেই বাণিজ্য চুক্তি করে ফেলতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছিল, ভারত ছিল তার একটি। কিন্তু ভারত কৃষি ও দুগ্ধ খাত মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত এবং রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি না হওয়ায় ৫ দফার আলোচনায়ও নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন কোনো চুক্তিতে পৌঁছতে পারেনি। রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প ভারতের পর চীনের শুল্ক বাড়ানোরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হতে পারে আমি জানি না। আমি এখনই বলতে পারছি না।
আমরা ভারতকে দিয়েছি, সম্ভবত আরও কয়েকটি দেশকে দিতে যাচ্ছি, তার মধ্যে চীনও থাকতে পারে। রাশিয়ার তেলের সর্ববৃহৎ আমদানিকারক তিন দেশ হচ্ছেÑ ভারত, চীন ও তুরস্ক। চলতি বছরের শুরুর দিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধ একবার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে ওয়াশিংটন চীনা পণ্যে ১৪৫% শুল্ক বসিয়েছিল। এর পাল্টা চীনও মার্কিন পণ্যে ১২৫% শুল্ক আরোপ করে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক আরও বাড়ায়, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে তা অর্থহীন হবে এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্ববাণিজ্যের ইতিহাসে তা হাস্যকর বলে গণ্য হবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি করতে বছরের শেষদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা আছে বলে ট্রাম্প কিছুদিন আগেই জানিয়েছেন। সাংহাই কো-অপারেশনের সম্মেলনে যোগ দিতে সামনেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও চীন যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তার সঙ্গে জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাক্ষাৎ হতে পারে।