ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

ইউক্রেনে শান্তি অধরা - রাশিয়াকে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি ট্রাম্পের

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৭:৫২ এএম

আলাস্কায় ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক এক সপ্তাহ পার হলো। শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শিগগিরই বড় সিদ্ধান্ত নেব। সেটা হতে পারে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা, ব্যাপক শুল্ক, দুটোই; অথবা কিছুই নয় এবং আমরা বলবÑ এটা তোমাদের লড়াই।’ আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের এক সপ্তাহ পরও ইউক্রেন সংকটের কোনো সমাধান না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির নতুন হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

শান্তি চুক্তির জন্য এবার পুতিনকে দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন তিনি। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শিগগিরই বড় সিদ্ধান্ত নেব। সেটা হতে পারে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা, ব্যাপক শুল্ক, দুটোই; অথবা কিছুই নয় এবং বলব এটি তোমাদের নিজেদের লড়াই।’ চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের একটি মার্কিন কারখানায় হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে আগুন লেগে কয়েকজন আহত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ট্রাম্প। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, মস্কো তার সঙ্গে পুতিনের বৈঠক ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তার মতে, যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার বিকল্প নেই। শুক্রবার তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়া সময় নষ্ট করছে।

যদিও ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আলাস্কার আলোচনার পর তিনি জেলেনস্কি ও পুতিনের বৈঠকের আয়োজন শুরু করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘আশার আলো’ দেখতে পাচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার একটি পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র পরিদর্শনকালে এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন এ কথা বলেন। তার বিশ্বাস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বগুণ দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে পারবে। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি মনে করি, দীর্ঘ অন্ধকার শেষে অবশেষে আশার আলো উদ্ভাসিত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা আলাস্কায় একটি চমৎকার, গঠনমূলক ও খোলাখুলি বৈঠক করতে পেরেছি।’

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে পুতিন এ কথা বলেন। পুতিন আরও বলেন, ‘এখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের ওপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করছে। তবে আমার বিশ্বাস, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্ব দেওয়ার যে সক্ষমতা, তা দুই দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বড় নিশ্চয়তা দেবে।’ রুশ প্রেসিডেন্টের কথায় ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত ও ব্যাবসায়িক চুক্তি করার বিষয়ে রাশিয়া আশাবাদী।

যদিও ১৫ আগস্ট ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকে ইউক্রেন সংঘাত সমাধানের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুতিন আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে বলেছেন, এ অঞ্চলে বিপুল খনিজ সম্পদ আছে এবং রুশ জ্বালানি কোম্পানি নোভাটেক ইতিমধ্যে সেখানে কাজ শুরু করেছে। রুশ প্রেসিডেন্টের গতিবিধি ইঙ্গিত করে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আপাতত কোনো আগ্রহ নেই মস্কোর।

তারা মনে করেন, ইউক্রেন দখলের সঙ্গে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের নিবিড় যোগাযোগ আছে। কাজেই এই যুদ্ধের অবসান মস্কোর কাছে পরাজয় হিসেবে গণ্য হবে। তবে দনবাসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার শর্তের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি, ইউক্রেনের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলটি দখল করতে পারলে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়বে কিয়েভ। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ৩ শর্ত দিয়েছেন পুতিন।

স্পষ্ট বলছেন, ন্যাটোতে যোগদান না করা, আঞ্চলিক অখ-তার প্রশ্নে ইউরোপ থেকে সেনা সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করা ছাড়াও দনবাসের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়াকে না দিলে সংঘাত থামাবে না মস্কো। রয়টার্স বলছে, পুতিনের তিন শর্তের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়লা ও ইস্পাতশিল্পে সমৃদ্ধ এই দনবাস দখল নেওয়া। ক্রেমলিন সূত্র বলছে, দনবাসের যে কয়টি শহর এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে কিয়েভকে।

বিপরীতে ঝাপোরিঝিয়া ও খেরসনের দিকে অগ্রসর হতে থাকা রুশ সেনাদের আপাতত থামার নির্দেশ দেবে মস্কো। মার্কিন পর্যবেক্ষক দল ও ওপেন সোর্সের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে দনবাসের ৮৮ শতাংশ এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭৩ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ আছে রুশ সেনাদের দখলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, একবার দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের নিয়ন্ত্রণ পেলে কোনোভাবেই ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না রাশিয়া। বরং ইউক্রেনীয় ভূখ-ে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে অভিযানের তীব্রতা বাড়াতে পারে মস্কো। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের আরও তিনটি গ্রাম দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া।

শুক্রবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের তিনটি গ্রাম দখল করেছে। এতে তারা যুদ্ধরত এলাকায় কিয়েভের মূল প্রতিরক্ষা লাইনের আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দোনেৎস্কের বিধ্বস্ত এলাকায় রুশ বাহিনী ধীরগতিতে এগিয়ে গেলেও একের পর এক স্থান দখল করে চলেছে। সেখানে একেবারে হাতেগোনা বাসিন্দা রয়েছেন এবং অল্প কিছু ভবন অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে জানিয়েছে, মস্কো দোনেৎস্ক এলাকায় কাতেরিনিভকা, ভলোদিমিরিভকা ও রুসিন ইয়ারের বসতিগুলো দখলে নিয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরকে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী না হওয়ার ব্যাপারে দোষারোপের পর মস্কোর পক্ষ থেকে নতুন করে গ্রামগুলো দখলে নেওয়ার ঘোষণা এলো। এতে দুদেশের শীর্ষনেতাদের স্বল্প সময়ের মধ্যে বৈঠকে বসে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণে একটি পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর কোস্টিয়ানটিনিভকা শহরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইউক্রেন। দোনেৎস্কের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্যাস পাইপলাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে কোস্টিয়ানটিনিভকায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়নি। শ্রমিকদের নিরাপত্তা না থাকায় সেখানকার পাইপলাইন মেরামত করাও অসম্ভব।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সহকারী আন্দ্রি ইয়েরমাক কোস্টিয়ানটিনিভকার ১০ তলা একটি আবাসিক ভবনের ছবি পোস্ট করেছেন। ভবনটি গোলা বর্ষণের কারণে আগুনে পুড়ে গেছে। আন্দ্রি ইয়েরমাক বলেন, ‘কাক্সিক্ষত ফলাফল না পেয়ে রাশিয়া তাদের গু-ামি অব্যাহত রেখেছে।’ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শুক্রবার জানিয়েছে, গোলার আঘাতে বেসামরিক একজন নাগরিক আহত হয়েছে। কিয়েভ আগেই ওই শহর ছেড়ে বেসামরিক নাগরিকদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।