যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, কারণ ওয়াশিংটন বিপুল অর্থ দিয়ে ইসরায়েলকে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করছে। সিনেটর ভ্যান হলেন বলেন, ‘আমরা এভাবে নীরব থাকতে পারি না, এখনই এই সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে।’ মার্কিন ডেমোক্রেটিক দলের দুই সিনেটর, ক্রিস ভ্যান হলেন এবং জেফরি মার্কলে, মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ অভিযোগ করেছেন। ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে নির্মূলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই কাজে সহযোগিতা করছে। ২১ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ইসরায়েলের কৌশল দুটি দিককে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে। প্রথমত, বাড়িঘর ধ্বংস করে গাজার মানুষদের ফিরে যাওয়ার মতো কোনো জায়গা না রাখা এবং দ্বিতীয়ত, খাদ্য, পানি ও ওষুধের মতো মৌলিক চাহিদা থেকে ফিলিস্তিনিদের বঞ্চিত করা। রিপোর্টে আরও অভিযোগ করা হয় যে, দক্ষিণ গাজায় সীমিত কয়েকটি সহায়তা বিতরণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যা খাদ্যকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের একটি স্পষ্ট প্রমাণ। সিনেটররা দাবি করেন যে, এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল সতর্ক করে বলেন, ‘এখন গাজার প্রতি পাঁচজন শিশুর একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। এটি শুধু মানবিক সংকট নয়, বরং গোটা প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।’
গাজায় সোমবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সোমবারের এই হামলায় কেবল গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ১৬ জন। খবর আলজাজিরার। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গত চার দিনে গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি। এর মধ্যে রয়েছে সাতটি স্কুল ও দুটি ক্লিনিক, যেগুলো বর্তমানে হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লাজারিনি জানান, গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণে দায়িত্বরত ইউএনআরডব্লিউএ বাধ্য হয়ে বিচ ক্যাম্পে অবস্থিত বৃহত্তম শরণার্থীশিবিরগুলোর একটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এখন গুরুত্বপূর্ণ পানি ও স্যানিটেশন সেবা মাত্র অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে।
এদিকে গাজা সিটিতে একের পর এক ভবন ধ্বংস করে চলেছে ইসরায়েল। উত্তরাঞ্চলীয় নগরী দখল ও জনসংখ্যাকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের লক্ষ্যে তারা এই হামলা চালাচ্ছে। ইউনিসেফ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে, গাজায় শিশুদের অপুষ্টি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগস্ট মাসে স্ক্রিনিংয়ে দেখা গেছে, শিশুদের মধ্যে ১৩.৫ শতাংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে, যা জুলাই মাসে ছিল ৮.৩ শতাংশ। বিশেষ করে গাজা সিটিতে এই হার আরও বেশি, যেখানে ১৯ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত।
ইউনিসেফ আরও জানায় যে, উত্তর গাজা এবং গাজা সিটিতে ইসরায়েলের হামলা ও সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশের কারণে ১০টি বহির্বিভাগীয় চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে শিশুদের চিকিৎসা সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হামলায় ধ্বংস হচ্ছে একের পর এক ভবন। গাজা সিটিতে একাধিক টাওয়ার ধ্বংস করা হয়েছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, গাজায় কোথাও আর নিরাপদ আশ্রয় নেই। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় নতুন করে অভিযান জোরদারের পর প্রায় প্রতিদিনই অর্ধশতের বেশি মানুষ নিহত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছে। এ ছাড়া গাজা সিটির ১৬টি ভবন ধ্বংস করা হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি আবাসিক টাওয়ারও রয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি জানান, শুধু গত চার দিনেই গাজা সিটিতে তাদের ১০টি ভবন হামলার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি স্কুল ও দুটি ক্লিনিকও রয়েছে, যেখানে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘গাজায় কোনো জায়গাই আর নিরাপদ নয়। কেউ নিরাপদ নয়।’
ইসরায়েলি বোমা থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তবে ইসরায়েল দাবি করছে, তারা সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। যদিও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আবাসিক ভবন, তাঁবু এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার দপ্তরও ধ্বংস করছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় নিহতের পাশাপাশি ইসরায়েলি অবরোধের কারণে অনাহারে প্রাণ যাচ্ছে অনেকের। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টিতে আরও দুজন মারা গেছেন। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪২২ জনে।