ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ে ৬ দিন ধরে নিখোঁজ ৩ মাদ্রাসাছাত্রী

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ০১:৫০ এএম

ঠাকুরগাঁওয়ে আয়শা সিদ্দিকা মাদ্রাসার তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজের ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নিরাপত্তার ঘাটতির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।

নিখোঁজ ছাত্রীরা মধ্যে একজন হিফজ বিভাগে অপর দুইজন আলেমা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। এ বিষয়ে গত শনিবার ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছে এক ছাত্রীর পরিবার।

মাদ্রাসার পরিচালক সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টায় সর্বশেষ মাদ্রাসায় দেখা যায় নিখোঁজ তিন ছাত্রীকে। ভোর ৫টার সময় তাদের রুমে ডাকতে গেলে তাদের সেখানে পাওয়া যায়নি। পরে মাদ্রাসার দোতলার বারান্দায় মশারী ঝুলন্ত অবস্থায় বাঁধা দেখতে পেয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ধারণা করেন তারা পালিয়ে গেছে।

শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১টার দিকে তারা রিকশায় প্রথমে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে যায়, পরে রেলস্টেশনে পৌঁছায়। সেদিন ট্রেন না থাকায় তারা একটি আবাসিক হোটেলে ভোর ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে। এরপর হোটেল ম্যানেজারের সহায়তায় আবার স্টেশনে গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে পীরগঞ্জগামী একটি অটোরিকশায় রওনা হয়। 

নিখোঁজ এক ছাত্রীর মা বলেন, ‘মাদ্রাসায় অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। তবুও কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা ভবনে কোনো প্রকার নিরাপত্তা প্রহরী রাখেনি। ভবনের বারান্দায় কোনো প্রকার গ্রিল নেই। ফলে সহজেই কেউ চাইলে ভবনের ভিতরে বা ভবন থেকে বাইরে যেতে পারছে। মাঝরাতে প্রায় রাত ১২টার পরে মাদ্রাসার ভবন থেকে নাবালিক মেয়েরা সকলের অগোচরে কীভাবে বের হয়ে যায়। আমরাতো আমাদের মেয়েদেরকে তাদের ভরসায় সেখানে রেখেছিলাম।’

আরেক নিখোঁজ কিশোরী বোন লাবণী বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মারধর ও নির্যাতন করতো। আমার বোন নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে আমাদের এই নির্যাতনের কথা জানিয়েছিল এবং দ্রুতই সেখান থেকে নিয়ে আসতে বলেছিল। তবে আমরা নিয়ে আসিনি, যার ফলে আজ আমার বোনকে হারাতে হলো। আমি নিশ্চিত, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্যাতনের কারণে এই তিন মেয়ে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে গেছেন।’

মাদ্রাসার ভবনে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার দায় স্বীকার করে আয়শা সিদ্দিকা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে। আমার মাদ্রাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছিলাম। তবে আমার বিরুদ্ধে যে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা ভিত্তিহীন। ওরা হয়তো কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।’

আয়শা সিদ্দিকা মাদ্রাসার পরিচালক মুফাসসির মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমারা যদি নির্যাতন করে থাকি, তাহলে মেয়েরা নিজের বাসায় ফিরে যাবে, পালিয়ে যাবে কেন। পালালে তার দায় তো আমরা নিব না। অন্য কেউতো পালায়নি, এরা কেনো পালাল। এরা যদি কোনো ছেলের হাত ধরে চোলে যায়, আমরা কি করতে পারব।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেয়েগুলোর কাছে কোনো মোবাইল না থাকায় তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা আমাদের কাছে কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে শিগগিরই এই বিষয়ে অগ্রগতির দিকে পৌঁছাবে পুলিশ।’