ঢাকা রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মিয়ানমার জান্তার পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১২:২৪ এএম

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর বড় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে উত্তর কোরিয়ার ওপরও। এ দুই দেশের মধ্যকার অস্ত্র বাণিজ্য ঠেকাতে নতুন এ পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন ওই দুই দেশের পাঁচ কর্মকর্তা ও এক প্রতিষ্ঠান। মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আমদানি করছেন। সেই সঙ্গে দেশটির সহযোগিতায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনা করছেন।

এদিকে মিয়ানমার দীর্ঘ দুই দশকের প্রচেষ্টার পর অবশেষে পারমাণবিক প্রযুক্তি অর্জনের পথে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি সামরিক জান্তা ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই একটি ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র মিয়ানমার দীর্ঘ দুই দশকের প্রচেষ্টার পর অবশেষে পারমাণবিক প্রযুক্তি অর্জনের পথে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি সামরিক জান্তা ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই একটি ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। মূলত রাশিয়ার সহায়তায়ই সামরিক জান্তার দুই দশকের চেষ্টা বাস্তবায়ন হচ্ছে। জান্তার দাবি, বিদ্যুৎ সংকটে ভোগা দেশের জন্য এটি সম্পূর্ণ ‘শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে’ ব্যবহৃত হবে। যদিও সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশ্লেষকদের।

কারণ এর আগে ২০০৮ সালে গোপনে উত্তর কোরিয়া সফর করে পরমাণু শক্তি অর্জনের খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা চালিয়েছিল দেশটি। ২০১০ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘পারমাণবিক ইউনিট’-এর প্রকৌশলী মেজর সাই থেইন উইন প্রকাশ্যে জানান যে, উত্তর কোরিয়ার সহায়তায় পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের গবেষণা করছে মিয়ানমার। থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাওয়াদ্দির খবরে বলা হয়েছে, মূলত মিয়ানমারের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষার যাত্রা শুরু হয় ২০০২ সালে, যখন সামরিক সরকার প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক গবেষণা রিঅ্যাক্টর নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। একই বছরের মে মাসে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি মন্ত্রণালয় মিয়ানমারে একটি ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র এবং দুটি ল্যাবরেটরি নির্মাণে সহযোগিতার চুক্তি করে।

২০০৪ সালে মার্কিন কংগ্রেসে উত্তর কোরিয়া থেকে মিয়ানমারে পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যদিও সামরিক জান্তা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার কোনো ইচ্ছা নেই বলে দাবি করে। তারা একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণের অধিকার থাকার কথাও জানায়। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ৪০০ জন তরুণ সেনা কর্মকর্তাকে পারমাণবিক প্রকৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য রাশিয়ায় পাঠানো হয়। ২০০৭ সালে রাশিয়ার রোসাটম ঘোষণা করে, তারা মিয়ানমারে পরিকল্পিত পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করবে। যেখানে কম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে গবেষণা, ওষুধ উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটানো হবে।

পরে ২০০৮ সালে থুরা শোয়ে মানের নেতৃত্বে মিয়ানমারের একটি সামরিক প্রতিনিধিদল গোপনে উত্তর কোরিয়া সফর করে। যেখানে পার্বত্য অঞ্চলে গোপন টানেল, ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণাগার পরিদর্শন করা হয়। এ সফর মিয়ানমারের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরো বাড়ায়। ২০১০ সালে পরিস্থিতি আরও নাটকীয় মোড় নেয়।

ওই বছর জুনে বিরোধীগোষ্ঠী ‘ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা’ একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে, যাতে সামরিক বাহিনীর গোপন পারমাণবিক প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে। এ তথ্য সরবরাহ করেন সাই থেইন উইন, যিনি সেনাবাহিনীর ‘নিউক্লিয়ার ইউনিট’ নামে পরিচিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ওয়ার্কশপের প্রকৌশলী ছিলেন। রাশিয়া থেকে পারমাণবিক শক্তিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী উইন দাবি করেন, তিনি বিশেষ যন্ত্র তৈরির কারখানার উপব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। যা পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।