ঢাকা রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি

অপ্রতিরোধ্য ভারতের সামনে আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ০১:৪৪ এএম

অপেক্ষার পালা শেষ। আজ এশিয়া কাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। এই মহা উত্তাপের ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। তাই ক্রিকেট বিশে^র বাড়তি আগ্রহ থাকবে এশিয়া কাপের ফাইনালে দিকে। যে দল জিতবে, তারাই এশিয়া ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মুকুট পরবে। ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল নিয়ে অনেক আলোচনা চারদিকে। অনেকে ভারতকে এগিয়ে রাখছেন। আবার অনেকে এগিয়ে রাখছেন পাকিস্তানকে।

অবশ্য পুরো এশিয়া কাপের টুর্নামেন্টের ছবির দিকে তাকালে দেখা যাবে, অপ্রতিরোধ্য একটি দল ভারত। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচটি মাত্র ২৭ বলে জিতে টুর্নামেন্ট শুরু করে তারা। এরপর বাকি ম্যাচগুলোতেও ভারতের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেভাবে গড়ে তুলতে পারেনি অন্য দলগুলো। সুপার ফোর পর্বে সুপার পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ভারত। দুবার পাকিস্তানের বিপক্ষে একপেশে ম্যাচ জিতেছে তারা। দাপুটে ক্রিকেট খেলেই ফাইনালের মঞ্চে এসেছে দলটি। যে ধরনের ক্রিকেট খেলছে ভারত, শিরোপার দাবিদার তারা। অবশ্য ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে পাকিস্তান দৃশ্যপট বদলে দিতে পারে। খারাপ খেলতে খেলতে জায়গামতো ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়ে পাকিস্তানের শিরোপা জিতে নেওয়ার আশঙ্কাও বাদ দেওয়া যায় না। তারাও চ্যাম্পিয়ন হতে পারে।

ট্রফিতে চোখ রেখেই ফাইনালে খেলবে পাকিস্তান। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো দলটি ফাইনাল ম্যাচ ঘিরে বেশ আত্মবিশ^াসী। ভারতের বিপক্ষে আগে দুবার হারের বদলা ফাইনালে নিতে চাইবে দলটি। ফাইনাল ম্যাচ জয়ের দিকেই এখন সব মনোযোগ পাকিস্তানের। ভারতের বিপক্ষে গত দুই ম্যাচে কী হয়েছে, সেটি ভুলে গিয়ে ফাইনালে খেলবে তারা। পাকিস্তান কোচ মাইক হেসন বলেছেন, ‘এই টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। প্রথম ম্যাচে আমরাই ভারতকে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা যথেষ্ট ভালো খেলেছি। কিন্তু অভিষেক শর্মার ইনিংসটাই আমাদের হারিয়ে দেয়। আর এবার ফের একবার সুযোগ এসেছে।

ফাইনাল জেতার ক্ষমতা রাখি আমরা।’ সালমান আলি আগাদের উদ্দেশে কোচ হেসন বলেন, ‘খেলায় মনোযোগ দাও। ফাইনালে শুরু থেকেই ভারতকে চাপে রাখার চেষ্টা করো। নিজেদেরও চাপ ধরে রাখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিকেটারদের সেই যোগ্যতা আছে। ভারত অন্যতম সেরা দল। ওদের চাপে রাখাটাই হবে আমাদের চ্যালেঞ্জ।’ হেসন জানান, ফাইনাল খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল তার দল। শেষমেশ সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন সালমান আলিরা। হেসন বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় সব ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়।

তবে আমরা ফাইনালে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত সেই লক্ষ্যে সফল হয়েছি। ভালো ক্রিকেট খেলেছি বলেই এত দূর আসতে পেরেছি।’ বাংলাদেশের বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতি থেকে এই জয় অনেক সাহস বাড়াবে ছেলেদের, মনে করেন হেসন। তিনি বলেন, ‘১০ ওভারের মধ্যেই সবাই ম্যাচের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে ফেলেছিলেন। ভেবেছিলেন আমরা হেরে যাব। সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জেতা খুবই কঠিন। আমরা কঠিন কাজটা করে দেখিয়েছি। ভারতের বিপক্ষে শেষ সাত ম্যাচে আমরা হেরেছি। সেই পরিসংখ্যানের কোনো মানেই থাকবে না, যদি ফাইনাল জিতি। ছেলেদের বলেছি, সামনে দেখো। পেছনে কী হয়েছে ভুলে যাও।’

এদিকে, ১৮ বছরের খরা কাটিয়ে উঠতে চায় ভারত। ২০০৭ সাল থেকে ফাইনাল মানেই পাকিস্তানের কাছে ভারতের হার। এই ইতিহাস এবার বদলানোর লক্ষ্য নিয়েই ফাইনালে খেলবে ভারতীয়রা। গত ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পর ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার বলেন, ‘এখন থেকেই ফাইনাল নিয়ে কিছু ভাবছি না। দলের কয়েকজনের পেশিতে টান লেগেছে। দিনটা (শনিবার) বিশ্রাম নিয়েই কাটাতে চাই। খেলায় যেভাবে নেমেছিলাম, সেরকমই তরতাজা হয়ে ফাইনালে নামব।’ ফাইনালে আগে দলকে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার বার্তা দিয়েছেন সূর্যকুমার। তিনি বলেছেন, ‘আমি চেয়েছিলাম দলের প্রত্যেকে নিজেদের পরিকল্পনা কাজে লাগাক। স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে খেলতে নামুক। কোনো রকম ভয় ছাড়াই। সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আশা করি, প্রত্যেকে যেটা চেয়েছিল, সেটাই পেয়েছে। ফাইনালে উঠতে পেরে ভালো লাগছে।’

ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংÑ এই তিন বিভাগে যে দুর্দান্ত ফর্মে আছে ভারতীয়রা, তাদের আটকাতে হলে অবিশ^াস্য ও অসাধারণ কিছু করে দেখাতে হবে ভারতকে। ফাইনালে ভারত তাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলবে। আগের দুই ম্যাচে যেভাবে দাপট দেখিয়ে জিতেছে তারা, সেই ছন্দ ধরে রাখার চেষ্টা করবে ভারত। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে রোমাঞ্চকর ও উত্তাপ ছড়ানোর আকর্ষণীয় একটি ম্যাচ দেখা যাবে বলে প্রত্যাশায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।