টেলিভিশন শো বা ঝলমলে ম্যাগাজিন সাক্ষাৎকারÑ কোথাও স্বামীর সঙ্গে দেখা যায়নি তার সরব উপস্থিতি। তার ইনস্টাগ্রাম পেজেও ব্যক্তিগত প্রচারণার চেয়ে বেশি স্থান পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের জীবন ও ফিলিস্তিনের সংগ্রামকে কেন্দ্র করে তার শিল্পকর্ম। কেবল জুন মাসের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির দিনে স্বামীর সঙ্গে তোলা একটি ছবি নজরে আসে অনেকের। দুবাই-শিক্ষিত এই সিরীয়-আমেরিকান এখন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে থাকেন। ইনস্টাগ্রামে নিজেকে একসময় ‘দামেস্কাসের’ বললেও ক্যাম্পেইন তথ্য অনুযায়ী তিনি ‘জাতিগতভাবে সিরিয়ান’ এবং জন্ম টেক্সাসে। মেগা সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির স্ত্রী রামা দুয়াজি মাত্র ২৮ বছর বয়সেই ইতিহাস গড়ে হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শহরটির প্রথম জেন-জি ফার্স্ট লেডি। প্রচারণাবিমুখ স্বভাবের হলেও বিজয় ঘোষণার মঞ্চে স্বামী মামদানির পাশে ছিলেন তিনি। বহু বছর পর ফার্স্ট লেডি পেল নিউইয়র্কের মেয়রের বাসভবন-গ্রেসি ম্যানশন। সিরীয়-আমেরিকান চিত্রশিল্পী ও ইলাস্ট্রেটর রামা দুয়াজি ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। চলতি বছরের শুরুতে সিটি হলে সাদামাটা আয়োজনেই মামদানিকে বিয়ে করেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মামদানির নির্বাচনি প্রচারণার শুরুতে ‘বোল্ড আইকনোগ্রাফি’ ও হলুদ-কমলা-নীল ক্যাম্পেইন ডিজাইনের পেছনে দুয়াজির বড় ভূমিকা ছিল। স্বামীর ডিজিটাল উপস্থিতি এবং তরুণ ভোটারের কাছে ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরিতেও তিনি পর্দার আড়ালে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।
তবে প্রচারের আলোয় আসতে তিনি নারাজ। খবর এনডিটিভির। ডেটিং অ্যাপ ‘হিঞ্জ’-এ মামদানির সঙ্গে তার পরিচয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দুবাইতে ‘নিকাহ’ ও এনগেজমেন্ট, পরে এ বছর নিউইয়র্ক সিটি ক্লার্কের অফিসে বিয়ে। স্বামী মামদানি লিখেছিলেন, ‘রামা শুধু আমার স্ত্রী নন; তিনি একজন অবিশ্বাস্য শিল্পী, যার নিজের মতো করে পরিচিত হওয়ার যোগ্যতা আছে।’ নিউইয়র্কের ‘স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টস’ থেকে ইলাস্ট্রেশনে মাস্টার্স করা দুয়াজির কাজ প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’, ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’, ‘বিবিসি’, ‘অ্যাপল’, ‘স্পোটিফাই’, ‘ভাইস’ ও লন্ডনের টেট মডার্নসহ বিশ্বখ্যাত প্ল্যাটফর্মে।তার শিল্পে ‘সিস্টারহুড’, আরব পরিচয়, সমষ্টিগত অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক প্রতিরোধÑ এগুলোই বেশি ফুটে ওঠে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি সহিংসতা, জাতিগত নিধন এবং মার্কিন জড়িত থাকার অভিযোগÑ এসব বার্তা তার ইলাস্ট্রেশনে প্রায়ই উঠে এসেছে।
একটি অ্যানিমেশনে তিনি নিউইয়র্কের দাতব্য সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধে অর্থায়নের অভিযোগও তুলেছেন। তার উদ্ধৃতিতে ‘একজন শিল্পীর দায়িত্ব সময়কে প্রতিফলিত করা।’ ইলাস্ট্রেশনের পাশাপাশি তিনি হাতে আঁকা নীল-সাদা সিরামিক প্লেটও তৈরি করেন। ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার, যেখানে তিনি শিল্প, রাজনৈতিক বক্তব্য ও ব্যক্তিগত মুহূর্ত শেয়ার করে থাকেন।
নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। নির্বাচনে জয়ের পর তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার মা-বাবা ও স্ত্রীকে। জয়ী ঘোষণার পর আবেগঘন ভাষণে মামদানি বলেন, ‘আজ আমি যে মানুষ হয়েছি, তা তোমাদের জন্যই। তোমাদের সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত।’ স্ত্রী রামাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তোমাকে পাশে চাই। এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় সময়। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মামদানি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিউইয়র্ক নগরের ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

