বিশ্বজুড়ে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার কমলেও এখনো ৫৫টি দেশ এই শাস্তি বহাল রেখেছে। অন্যদিকে, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও বিচারব্যবস্থার আধুনিকায়নের যুক্তিতে ইতিমধ্যে ১১২টি দেশ মৃত্যুদ- পুরোপুরি বা কার্যত বাতিল করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের জানুয়ারিতে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে এক খুনির মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। দেশটিতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে এটাই মৃত্যুদ- কার্যকর করার ঘটনা। অন্যদিকে জাপানে ৩৬ জনের প্রাণহানি ঘটানো অগ্নিসংযোগের দায়ে এক ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। বিবিসি প্রতিবেদন বলেছে, ২০২২ সালে মাত্র ৯টি দেশ ‘সবচেয়ে গুরুতর’ অপরাধে (যেমন একাধিক খুন, যুদ্ধাপরাধ) মৃত্যুদ- কার্যকর রেখেছে। আরও ২৩টি দেশে মৃত্যুদ- আইনগতভাবে আছে, তবে গত এক দশকে একবারও কার্যকর হয়নি। ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’ তাদের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে মৃত্যুদ- বৈধÑ এমন ৫৫টি দেশ ও অঞ্চলের একটি তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, জাপান, মিসর, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (ডিআর কঙ্গো), ভিয়েতনাম, ইরান, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, সুদান, উগান্ডা, ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, তাইওয়ান।
আরও রয়েছে সোমালিয়া, জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ সুদান, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কিউবা, বেলারুশ, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, লেবানন, ফিলিস্তিন, ওমান, কুয়েত, কাতার, জ্যামাইকা, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা, লেসোথো, বাহরাইন, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, কোমোরস, গায়ানা, বেলিজ, বাহামাস, বার্বাডোস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রানাডাইনস, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা, ডোমিনিকা এবং সেন্ট কিটস ও নেভিস। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সরকারি পরিসংখ্যান, সংবাদমাধ্যমের তথ্য এবং মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ব্যক্তিদের পরিবার ও প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে এ বিষয়ে হিসাব তৈরি করেছে। তাদের মতে, চীনই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মৃত্যুদ- কার্যকরকারী দেশ।
চীনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদ- কার্যকর করেছে ইরান, সৌদি আরব, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে অন্তত তিনটি প্রকাশ্য মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় এবং পাঁচজনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়, যারা অপরাধের সময় ১৮ বছরের কম বয়সী ছিলেন। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের ১১টি দেশ নিয়মিতভাবে মৃত্যুদ- কার্যকর করে। এর মধ্যে রয়েছেÑচীন, মিসর, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন। সৌদি আরব ২০২২ সালে বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদ- কার্যকর করেছে। আর বাহরাইন, কমোরস, লাওস, নাইজার ও দক্ষিণ কোরিয়াÑ এ পাঁচ দেশে কয়েক বছর ব্যবহার না হলেও ২০২২ সালে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালের তুলনায় মৃত্যুদ- বেড়েছে। তবে তা এখনো ১৯৯৯ সালের সর্বোচ্চ সংখ্যার বেশ নিচে। মৃত্যুদ- বাতিল করা দেশগুলো হলো (ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর তথ্য অনুযায়ী) মেক্সিকো, ফিলিপাইন, তুরস্ক, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি, কলম্বিয়া, স্পেন, আর্জেন্টিনা, কানাডা, অ্যাঙ্গোলা, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, উজবেকিস্তান, মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার, আইভরিকোস্ট, নেপাল, ভেনিজুয়েলা, অস্ট্রেলিয়া, চাদ, কাজাখস্তান, সেনেগাল, রোমানিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইকুয়েডর, কম্বোডিয়া, গিনি, বেনিন, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, বলিভিয়া, হাইতি, বেলজিয়াম, ডোমিনিকান রিপাবলিক, হন্ডুরাস, পাপুয়া নিউগিনি, সুইডেন, চেকিয়া। আরও আছে পর্তুগাল, আজারবাইজান, গ্রিস, টোগো, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিয়েরা লিওন, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, প্যারাগুয়ে, নিকারাগুয়া, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, কোস্টারিকা, পানামা, ক্রোয়েশিয়া, জর্জিয়া, মঙ্গোলিয়া, উরুগুয়ে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, নামিবিয়া, মলদোভা, আর্মেনিয়া, লিথুয়ানিয়া, আলবেনিয়া, গ্যাবন, গিনি-বিসাউ, স্লোভেনিয়া, লাটভিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, তিমুর-লেস্তে। অন্য দেশগুলো হলো সাইপ্রাস, এস্তোনিয়া, মরিশাস, জিবুতি, ফিজি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভুটান, লুক্সেমবার্গ, সুরিনাম, মন্টেনেগ্রো, মাল্টা, কেপ ভার্দে, আইসল্যান্ড, ভানুয়াতু, সাওতমে ও প্রিন্সিপে, সামোয়া, কিরিবাতি, সেশেলস, মাইক্রোনেশিয়া, অ্যান্ডোরা, লিচেনস্টেইন, মোনাকো, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, সান মারিনো, পালাউ, কুক দ্বীপপুঞ্জ, নাউরু, টুভালু, নিউই ও ভ্যাটিকান সিটি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন