পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় একটি বেসরকারি সেন্ট মেরি ক্যাথলিক স্কুলে হামলা চালিয়ে ২১৫ শিক্ষার্থী এবং ১২ শিক্ষককে অপহরণ করেছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার দেশটির উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ নাইজারে ঘটেছে এ ঘটনা। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অধিকার আদায়ের সংগঠন ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (কান), এবং নাইজার প্রাদেশিক পুলিশ উভয়েই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে ২০২৪ সালের মার্চে দেশটির কাদুনা প্রদেশের একটি স্কুল থেকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গণ-অপহরণের মধ্যে সেটিই ছিল বড় ঘটনা। সম্প্রতি নাইজেরিয়ার বিভিন্ন স্কুলে হামলা বেড়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহে সংঘাতপ্রবণ এলাকার মোট ৪৭টি স্কুল ও কলেজ বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই আবারও এমন বড় অপহরণের ঘটনা ঘটল। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকেই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কেব্বি প্রদেশের একটি মেয়েদের স্কুলে হামলা চালিয়ে ২৫ নারী শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। সে সময় তারা স্কুলের উপ-অধ্যক্ষকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। নাইজার প্রাদেশিক সরকার হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া বিশ্বের অন্যতম সহিংসতাপ্রবণ দেশ। বিভিন্ন প্রদেশে বহুসংখ্যক সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে, যারা ডাকাতি, লুট, অপহরণ, নারী-শিশুপাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত। এসব গোষ্ঠীর কয়েকটি আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের আদর্শে প্রভাবিত। তারা প্রায়ই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়, ব্যবসাকেন্দ্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষভাবে উদ্বেগপূর্ণ দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ায় স্কুলছাত্রী অপহরণ এখন নিরাপত্তাহীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে স্কুল হলো কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুÑ যেখানে হামলা করলে বেশি মনোযোগ পাওয়া যায়। ইউনিসেফ গত বছর বলেছিল, সংঘাতপ্রবণ ১০টি অঙ্গরাজ্যের মাত্র ৩৭ শতাংশ স্কুলে হুমকি শনাক্তের প্রাথমিক সতর্কতার ব্যবস্থা রয়েছে। এদিকে এমন সময়ে এসব অপহরণের ঘটনা ঘটছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর গণহত্যা চলছে।

