ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে টানা চার দিন ধরে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে। উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে উভয় দেশই এখন আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার অপেক্ষায়। তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুই দেশের নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করবেন।

তীব্র লড়াই, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে অন্তত ১২টি পয়েন্টে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার ঘটনা ঘটছে। উভয় দেশই একে অপরকে বেসামরিক এলাকায় হামলার অভিযোগ করে দোষারোপ করছে। কম্বোডিয়া জানায়, থাইল্যান্ডের গোলাবর্ষণ ও এফ-১৬ বিমান হামলায় তাদের সীমান্তের ৩০ কিলোমিটার ভেতর পর্যন্ত ঘরবাড়ি, স্কুল, রাস্তা ও মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে থাইল্যান্ড বলছে, কম্বোডিয়ার কামান ও রকেট হামলায় তারা আক্রান্ত হয়েছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের পাল্টা আঘাত চালানো ছাড়া উপায় ছিল না। সংঘাতে উভয় দেশেরই প্রাণহানি বাড়ছে। কম্বোডিয়ায় এক শিশুসহ ১০ জন নিহত এবং ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছে। থাই সেনাবাহিনীর হিসাবে নিহত হয়েছে ৯ জন সেনা এবং আহত ১২০ জনের বেশি। আরেক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, মোট ৮ থাই সেনা এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন। তিন দিনে সীমান্তের দুই পাশ মিলিয়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছে।

ট্রাম্পের ফোনকল নিয়ে সতর্ক থাইল্যান্ড

জুলাই মাসের পাঁচ দিনের যুদ্ধে ট্রাম্প ফোন করে উভয় দেশকে অস্ত্রবিরতিতে রাজি করান এবং বাণিজ্য আলোচনায় প্রভাব বিস্তার করার হুমকি দিয়ে সহিংসতা বন্ধ করেন। অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয় সেই অস্ত্রবিরতি। তবে এবার থাইল্যান্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল বলেছেন, ট্রাম্প ফোন করলে তিনি সরাসরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবেন, তবে সংকটের সমাধান চান দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও দুই দেশের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। যদিও কোনো সমাধান হয়নি। আনোয়ারের মধ্যস্থতায় হওয়া আগের চুক্তিও স্থায়ী হয়নি।

স্থায়ী সমাধান প্রশ্নের মুখে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পান্না ত্রিভুজ নামের বিতর্কিত ভূখ- নিয়ে দীর্ঘদিনের মূল সমস্যাটি সমাধান না হলে কোনো যুদ্ধবিরতিই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। জমি দাবি নিয়ে ১১৮ বছর ধরে চলা দ্বন্দ্বই সংঘাতকে ঘুরেফিরে সহিংসতায় ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক গ্রেগ পোলিং বলেন, ‘ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি আসলে শুধু এক ধরনের বিরতি, শান্তিচুক্তি নয়। মূল সমস্যাগুলো অক্ষত থাকলে যেকোনো সময় তা ভেঙে পড়বেÑ এটাই স্বাভাবিক।’ সংঘাতের ভয়াবহতায় সীমান্তের দুই পাশের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে, কেউ আবার গোলাবর্ষণের শব্দ শুনলেই বাংকারে দৌড়াচ্ছেন। শীতের মৌসুমে বিপন্ন এই মানুষগুলো বলছেন, স্থায়ী শান্তি ছাড়া তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার উপায় নেই। ট্রাম্পের সম্ভাব্য ফোনালাপ কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবেÑ নাকি আবারও ভঙ্গুর একটি অস্ত্রবিরতি তৈরি হবেÑ এমন প্রশ্নই এখন আন্তর্জাতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।