ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

তবুও হোক নির্বাচন, থামুক ক্যাঁচাল

রিন্টু আনোয়ার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১২:২৬ এএম

পুরোদমে নির্বাচনি প্রস্তুতির মাঝেও নানা খটকা, প্রশ্ন, ক্যাঁচাল। বাদ যাচ্ছে না নির্বাচন ঠেকিয়ে দেওয়া বা বানচালের কথাও। যার রেশ টেনে কড়া হুমকি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। বলেছেন, কেউ নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কী রকম খাটাখাটুনি তার কমিশন করছে, তার নমুনা দেখানো হচ্ছে প্রতিদিনই। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের শক্তি-সামর্থ্যরে জানান দিচ্ছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পুলিশ, প্রশাসন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের বড় ধরনের বদলি-পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় লটারি করে ৬৪ জেলায় এসপি চূড়ান্ত করে তাদের বদলি ও পদায়ন করা হয়। এর মধ্যে ৫০ জন বর্তমান এসপিকে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলি করা হয়েছে। আর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা ১৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে জেলার এসপি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী পুলিশ কমিশনার পদে নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একদিন বাদে পুলিশের ৩৩ জন কর্মকর্তাকে উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে। এর আগে একাধিক প্রজ্ঞাপনে ৫০ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেয় সরকার। পাশাপাশি ইউএনও পর্যায়েও বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৬৬ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না নির্বাচনে ডিসি, এসপি ও ইউএনওদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইউএনওদের অনেকেই সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যদিও এবার এখনো রিটার্নিং কর্মকর্তা কারা হবেন, সে সিদ্ধান্ত জানায়নি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সামনে রেখে পদোন্নতি-বদলির ঘটনা বিচার বিভাগেও। সম্প্রতি জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও যুগ্ম জেলা জজ পদে ৮২৬ জনকে পদোন্নতি ও পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ ২৫০ জন, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ ২৯৪ জন ও সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা জজ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২৮২ জন। বিচার বিভাগের এ পদোন্নতির সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক না থাকলেও ঘটনা বিচারে গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়নে গণভোটের অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এটি নির্বাচনের সঙ্গে বেশ প্রাসঙ্গিক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে আয়োজন করা হবে গণভোট। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জনগণের অভিপ্রায় নেওয়া হবে। অধ্যাদেশে বলা হয়, চব্বিশের ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত কতিপয় প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি রয়েছে কি না, তা যাচাইর জন্য গণভোটে উপস্থাপন করতে সরকার জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন ও জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত কতিপয় প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি রয়েছে কি না তা যাচাইয়ে গণভোটের বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত এ অধ্যাদেশ।

গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট গ্রহণ। (১) গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং উল্লিখিত প্রশ্নটিতে জনমত যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত একক ব্যালটের মাধ্যমে প্রত্যেক ভোটার ভোটদান করবেন। (২) গণভোটের ব্যালট ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হতে পৃথক ও ভিন্ন রঙের হবে। ব্যালট বাক্স বিষয়ে বলা হয়েছে, (১) নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত, নির্ধারিত এবং সরবরাহকৃত ব্যালট বাক্স ভোটগ্রহণের জন্য ব্যবহার করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরবরাহকৃত একই ব্যালট বাক্স গণভোটের ব্যালট বাক্স হিসাবে ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করতে পারবে। (২) রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার প্রত্যেক প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যালট বাক্স সরবরাহ করবেন। অধ্যাদেশের ১ ও ২ ক্রমিকে সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন এবং সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে। অধ্যাদেশের ৩ ক্রমিকে গণভোটের প্রশ্ন বিষয়ে এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, গণভোটে একটি প্রশ্ন উপস্থাপন করা হইবে-‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নি¤œলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?’, (হ্যাঁ/না)। এ ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ হইবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। সংবিধান সংশোধন করতে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হয়েছেÑ সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে। জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।

গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত জানাতে হবে। গণভোটে চারটি প্রস্তাবের ওপর একটি প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দিতে হবে ভোটারদের। প্রশ্নটি হবে, আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নি¤œলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন? ক. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে। খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে। ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।

জুলাই সনদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান বিতরণের দায়িত্ব সরকারের দিক থেকে ঠিকভাবে করা হয়নি।  ‘গণভোটের’ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বিষয়ে সমাজের সব শ্রেণি মানুষের মধ্যে যথাযথভাবে শেয়ার করা হয়নি। রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার জন্য ‘আইন তৈরি’ কখনোই গিনিপিগ হতে পারে না। এক সরকার ভালো লাগবে, আরেক সরকারকে ভালো লাগবে নাÑ এমন বৈরিতায় রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য থেকে বারবার বিচ্যুতকরণ ভালো বার্তা নয়। তবে, ঘটনা এবং বর্ণনা পরিষ্কার। পূর্বাপর ঘটনাবলিও ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। ঠিক হবে আগামী রাজনীতির পথরেখাও। ‘না’ ভোট জিতলে, যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, তারা সঙ্গে সঙ্গে সরকার গঠন করবে। কোনো গণপরিষদ গঠন করা হবে না। সনদ নিয়ে অতি আগ্রহীদের বিশ্বাস, ভোটাররা সমানে  ‘হ্যাঁ’ বলবেন। তা হলে না বলার কেউ থাকবে না? আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত। তাদের ভোটাধিকার স্থগিত নয়। দেশের সব চেয়ে বড় দল বিএনপি যদি দলীয়ভাবে ‘না’-এর পক্ষে অবস্থান নেয়, কী হতে পারে অবস্থাটা?

‘হ্যাঁ’ বা ‘না’Ñ যা-ই হোক না কেন, এ নিয়ে সামনে অনেক প্রশ্ন উঠবে-তা স্পষ্ট। অনেকেই প্রশ্ন করবেন, ইউনূস সরকারের কি ম্যান্ডেট ছিল এতসব পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার? এখন রাজনীতিতে যে জগাখিচুড়ি দশা, তাতে তাদের দায়িত্বও কম নয়। অনেক কাঠখড় পোড়ানো হয়েছে, অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় হয়েছে এই সনদের পেছনে। তরপরও সামনে আরও ক্যাচাল অপেক্ষমাণ। তা হ্যাঁ জিতলেও হতে পারে। যেসব বিষয়ে বিএনপি অসম্মতি বা ডিসেন্ট দিয়ে রেখেছে, সেগুলোর কী হবে? প্রশ্ন আরও আছে। সনদ হারলে পরবর্তী নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান কি নিরপেক্ষ কেউ হবেন না? দেশজুড়ে এসব নিয়ে আলোচনার পারদ চড়ছে। কথার খই ফুটছে রাস্তা-ঘাটের আলোচনায়। নির্জ্জলা সত্য হচ্ছে ‘গণভোট’ যে কি নিয়ে হবে তা এখনো অনেকের কাছে পরিষ্কার নয়। এখানে শ্রীলঙ্কা-নেপালের  প্রেক্ষাপট বেশ প্রাসঙ্গিক। দেশ দুটিতেও প্রায় এ স্কেল্ইে ক্ষমতার পট বদলেছে। কিন্তু, পরবর্তী দৃশ্যপট এমন হয়নি। কাদা ছোড়াছুড়ি এ পর্যায়ে যায়নি। তারা  রাজনীতিকে জনমুখী করতে পেরেছে। বাংলাদেশ পারেনি।

এখানে অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাবই দৃশ্যমান। নির্বাচন পদ্ধতিতে বিগত কয়েক দশকের নমুনাই প্রবল। রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির চর্চা দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া থেকেই। যে কোনো বড় ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পেতে একজন প্রার্থীকে কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। সৎ, যোগ্য; কিন্তু আর্থিকভাবে দুর্বল প্রার্থীদের জন্য এটি রাজনীতিতে লাল সংকেত। নমিনিশনই নয়, প্রার্থীদের বিপুল অর্থ ব্যয় এখন জয়ের অন্যতম শর্তে পরিণত হয়েছে। এই বিপুল অর্থের উৎস, তা বৈধ না অবৈধ এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষেরও জানার গরজ নেই। নির্বাচনের খরচ জোগানো এই ধনী অর্থদাতা বা পৃষ্ঠপোষকরা এ ব্যবস্থাকে এক ধরনের ব্যবসায়িক বিনিয়োগ হিসেবে দেখবেÑ এটাই স্বাভাবিক। ঘটনা এবং ইতিহাস বলছে, অর্থ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার যত সুযোগ পেয়েছে, তা তত দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতাকে আমন্ত্রণ করেছে। এ পুরো পরিস্থিতির সবচেয়ে গুরুতর পরিণতির শিকার হয় দেশের শাসনব্যবস্থা। বাংলাদেশে ১৯৯১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেখা গেছে, সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৬০-৭০ শতাংশের বেশি ব্যবসায়ী শ্রেণির মানুষ। সরকারি দল বা বিরোধী দল-নির্বিশেষে সংসদ সদস্যপদ মূলত ধনিক শ্রেণির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মাত্র ০.০৭ শতাংশ মানুষের কাছে এক কোটি টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। বাস্তবে সংসদ সদস্যদের বিশাল অংশই এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ফলে তারা বাকি ৯৯.৯৩ শতাংশ সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব বা তাদের দুঃখ-কষ্ট কতটা বোঝার চেষ্টা করবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। নির্বাচনে বিপুল অর্থ ব্যয়ের সুযোগে অনেক রাজনীতিবিদ গুরুতর অপরাধমূলক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় টিকে যান। নমুনা বলছে, সামনেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তারপরও যে কোনো সচেতন ও গণতন্ত্রকামী নাগরিকের কাছে অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকারই বেশি প্রত্যাশিত।

তবে মূল কথা হলো, রাজনীতিবিদদের বাগ্বিত-া ছেড়ে নিঃশর্তভাবে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতে কেউ যেন না ভাবেনÑ এই সংস্কার, ভোট এবং জিত দিয়ে চিরস্থায়ী রাজা হতে পারবেন। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে সকল ক্ষমতাধর রাজা-মহারাজারাও একদিন সময়ের স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ীতার এক গভীর রূপক, যেখানে উত্থান-পতন ঘটে এবং আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই পরিবর্তিত হয়ে যায়। ক’দিন আগে আর পরে। কবির ভাষায় বললে-

‘কে আছে কোথায়, কে আসে কে যায়,

নিমেষে প্রকাশে, নিমেষে মিলায়-

বালুকার ‘পরে কালের বেলায়

ছায়া-আলোকের খেলা!

জগতের যত রাজা-মহারাজ

কাল ছিল যারা কোথা তারা আজ,

সকালে ফুটিছে সুখ-দুখ-লাজ’