মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুহাম্মদ রফিক ইসলাম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:১৪ এএম

লালুর বন্ধু হুজাইফা

মুহাম্মদ রফিক ইসলাম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:১৪ এএম

লালুর বন্ধু হুজাইফা

লালুকে অন্যের হাতে তুলে দিতে গেলে বেঁকে বসল হুজাইফা। সে কোনোমতেই মানতে পারছে না লালু অন্যকারো হয়ে যাক। এ নিয়ে বাবা বহর মিয়া তো রাগে গড়গড় করছেন। ছেলের প্রতি নিজের রাগটা ঝাড়লেন গিয়ে স্ত্রী শামীমা বেগমের ওপর। স্বামীর মুখের ওপর চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলার সাহস হলো না তার। এই ধরনের শিক্ষা পারিবারিকভাবেই ছিল না শামীমা বেগমদের পরিবারে। তিনি তার মা-চাচি, দাদিদের মুখে মুখে শুনে এসেছেন, স্বামীর মেজাজে নীরব থাকতে হয় স্ত্রীদের। স্বামীরা বাইরের মানুষ, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘর-সংসার পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন।

তাই তিনি নীরব থেকে ছেলে হুজাইফার হাতটা টেনে ধরে বুকের কাছে নিয়ে ঠোঁটে-মুখে চুমু বসিয়ে দিলেন এবং মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, লালুকে ছাইড়া দেও। সে বেড়াইতে যাইতাছে। কয়দিন পর আবার ফিইরা আইব। মায়ের মুখের কথায় মন গলে না হুজাইফার। সে লালুর গলায় বাঁধা দড়িটি আরও শক্ত করে ধরে অভিমানের ভাষায় উত্তর দিল, তুমিও বাবার মতো মিছা কথা কও। আমি দেখছি না, বাবা টেহা হাতে নিছে! না বেচলে টেহা হাতে নিল ক্যান?

এইবার বহর মিয়া ছেলের হাতের সঙ্গে পেঁচানো দড়িটি ছাড়িয়ে নিয়ে লালুকে টেনে নিয়ে চলল বাহির বাড়ির দিকে। অসহায়ের মতো ফিরে ফিরে পেছনের দিকে তাকাতে তাকাতে ভাঙা ভাঙা পায়ে এক পা আগায় তো দুই পা পিছিয়ে আসে লালু। ক্রেতাদের একজন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলল লালুর মাকেও। বাড়ি থেকে আইলপথ পাড়ি দিয়ে রাস্তা অবধি পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই আওয়াজ তুলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল হুজাইফা। সে কী আহাজারি! প্রিয় জিনিসের মায়া ছাড়তে পারে না সে।

লালুর বয়স মাস ছয়। জন্মের পর থেকে মায়ের কাছ ছাড়া বাকি সময়টা কেটেছে ওর হুজাইফার সঙ্গে খেলা, খুনশুটি দিয়ে। হুজাইফাও পরম মমতায় আগলে নিয়েছে লালুকে বন্ধুর মতো। খেতে দিয়েছে ভাতের মাড়, ভুসি। বিকেল হলেই বেরিয়ে পড়েছে সড়কে, ঘাস মুখে তুলেও খাইয়ে দিয়েছে। সময়মতো গোসল করিয়ে দিয়েছে নিজ হাতে। আরও কত কী! এভাবে একটা সময়ে এসে দুজন দুজনের মাঝে যেন এক হয়ে গেছে। কেউ কাউকে ছাড়া চলে না এক মুহূর্তও। একটি অবুঝ প্রাণীর সঙ্গে হুজাইফার এমন শিশুসুলভ বন্ধুত্ব দেখে বহর মিয়া ও শামীমা বেগম ঘুমভাঙা রাত্রিতেও গল্প করেছেন কত!  সঙ্গে সঙ্গে লালুও হাম্বা হাম্বা বলে আর্তচিৎকারে ফেটে পড়ল।

হয়তো এটাই ছিল তার হুজাইফার ভালোবাসার প্রতি কাতর সংহতি জানানোর ভাষা। লালু বার কয়েক চেষ্টাও করল দড়ির বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার। পারল না। তারপর মায়ের পেছনে পেছনে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল লালু। সে হয়তো বুঝতে পেরেছে, মালিক বিক্রি করে দিয়েছে ওদের। তাই নিরুদ্দেশে যাত্রা ছাড়া উপায় নেই আর। কিছুক্ষণ এগিয়ে হয়তো শেষবারের মতো হুজাইফাকে দেখার জন্যে পেছনে ফিরে তাকিয়ে লালু মাটিতে ঢলে পড়ল।

বন্ধুর বিয়োগব্যথা সইতে পারল না হুজাইফাও। বাবা বহর মিয়াকে জড়িয়ে ধরে হুজাইফা কাঁদতে কাঁদতে বলল, টেহা অইলে তুমি আমারেও বেইচা দিতে পারবা! ছয় বছরের ছেলে হুজাইফার মুখে এমন কথা শুনে বহর মিয়া উপরের দিকে তাকিয়ে নীরব কান্নায় ভেঙে পড়লেন। কিছুই বলতে পারলেন না। শামীমা বেগম আঁচলে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। তিনি ছেলেকে বলতে পারলেন না যে, গরিবের আবেগ টেহার কাছে বান্ধা-রে, বাপ। গরিবের আবেগ-ভালোবাসা থাকতে নাই। এখনো প্রায় রাতে হুজাইফা ঘুমের ঘোরে প্রলাপ বকে, লালু-রে আইনা দেও মা! তুমি না কইছিলা লালু বেড়াইতে গ্যাছে...! বাবা তোমারে তো বেইচা দেয় নাই লালু...! ফিইরা আইয়ো...!

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!