ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

ছোট রাঁধুনির বড় স্বপ্ন

মির্জা হাসান মাহমুদ
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০১:৪৩ এএম

যদি কেউ তোমাকে বলে, একটা ইঁদুর হলো প্যারিস শহরের সেরা রাঁধুনি। শুনে নিশ্চয়ই হাসি পাবে তোমার, তাই না! কিন্তু, এমনই এক আশ্চর্য গল্প নিয়ে ২০০৭ সালে মুক্তি পায় একটি চমৎকার অ্যানিমেশন সিনেমা। যে সিনেমায় দেখা যায় একটি ইঁদুর নিজের প্রতিভা আর সাহস দিয়ে প্রমাণ করে স্বপ্নের আসলেই কোনো সীমা নেই! পিক্সারের সেই বিখ্যাত অ্যানিমেশন মুভিটির নাম হলো ‘র‌্যাটাটুইলি’।

গল্পের শুরু হয় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। সেখানেই এক জায়গায় থাকে রেমি নামের ছোট্ট একটি ইঁদুর। তার সঙ্গে পরিবারসহ আরও অনেক ইঁদুর থাকে। তবে অন্যসব ইঁদুরের থেকে আলাদা এক স্বভাব রয়েছে রেমির। সে অন্যদের মতো কেবল খাবার খায় না; সে খাবারের গন্ধ নেয়, স্বাদ বিচার কর। সে সারাক্ষণ ভাবতে থাকে, কেমন করে রান্না করলে আরও ভালো করা যায়। তার স্বপ্ন একটাই, একদিন সে বিখ্যাত রাঁধুনি হবে! সেসময় প্যারিসের বিখ্যাত রাঁধুনি ছিলেন গুস্তো। গুস্তো ছিলেন রেমির অনেক বড় অনুপ্রেরণা। টিভি দেখে, বই পড়ে তো সে রান্না অনেকটা শিখে ফেলে। কিন্তু সমস্যা হলো, মানুষ তো ইঁদুরকে দেখলেই চেঁচিয়ে ওঠে মারতে যায়। ইঁদুরকে রান্নার সুযোগ কে দেবে? অন্যদিকে রেমির পরিবার তাকে বোঝায়, রাঁধুনি হওয়া ইঁদুরের কাজ নয়। তার বাবা বলে মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু রেমি নিজের স্বপ্ন ছাড়ে না। সে মনে করে, রান্না করতে জানলে সেটা যেই হোক না কেন, মানুষ হোক বা ইঁদুর, তাতে কী আসে যায়?

এর মধ্যে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। এক দুর্ঘটনায় রেমি তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি টানেলের মধ্যে চলে যায়। সেখানে গুস্তোর বইটি তার সঙ্গে ছিল। বইটি পড়তে পড়তে রেমি একসময় কল্পনায় গুস্তোকে দেখতে শুরু করে। গুস্তো তাকে টানেল থেকে বাইরে বের হতে বলে। বাইরে বের হয়েই রেমি দেখে সামনে আইফেল টাওয়ার। পাশেই একটি রেস্টুরেন্ট দেখে রেমি সেটাতে ঢুকে পড়ে। সেটা ছিল সেই বিখ্যাত রাঁধুনি গুস্তোর রেস্টুরেন্ট। সেখানে রেমি এক তরুণ কর্মচারীকে দেখে, যার নাম লিঙ্গুইনি। লিঙ্গুইনি রেস্টুরেন্টে কাজ করলেও সে আসলে কিছুই পারে না, এমনকি সঠিকভাবে স্যুপও বানাতে জানে না! কিন্তু এক মজার ঘটনার মাধ্যমে রেমি ও লিঙ্গুইনি এক হয়ে যায়। সবার অজান্তে লেঙ্গুইনিকে রান্নার কাজে সাহায্য করে রেমি। রেমি এত ভালো রান্না জানত যে, খাবারগুলো সবাই অনেক পছন্দ করত। তবে সবাই জানত সেগুলো লেঙ্গুইনি রান্না করে। যার ফলে লেঙ্গুইনি রাতারাতি ফেমাস হয়ে যায়। সবাই তাকে ভালো রাঁধুনি হিসেবে চিনতে শুরু করে। মূলত রান্নার সময় লিঙ্গুইনি যে টুপি পরে, তার ভেতর থেকে রেমি তার চুল টেনে টেনে লিঙ্গুইনিকে কন্ট্রোল করে! এভাবে তারা একসঙ্গে বানায় নানা অসাধারণ খাবার, যা দেখে সবাই অবাক। শেষ পর্যন্ত নানা ধরনের মজার গল্পের মাধ্যমে মুভিটি শেষ হয়।

পিক্সার এনিমেশন স্টুডিওর প্রযোজনায় নির্মিত এবং ওয়াল্ট ডিজনি পিকচা?র্সের মাধ্যমে সরবরাহকৃত দারুণ এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ব্র্যাড বার্ড। মুক্তির পর ব্যাপক জনপ্রিয়তার সঙ্গে পেয়েছে নানা পুরস্কারও। যদিও এটি একটি ফ্যান্টাসি সিনেমা, বাস্তবের সঙ্গে যার কোনো মিল নেই, তবুও শেখার মতো অনেক বিষয়ই রয়েছে এখানে। এই মুভিটি যে কতটা উপভোগ্য, তা জানতে হলে দেখতে বসে যাও এখনই। শুধু উপভোগ্য নয়, শিক্ষণীয়ও বটে। মুভির এক বিখ্যাত ডায়ালগ হলো, ‘অহুড়হব পধহ পড়ড়শ!’ অর্থাৎ ‘যে কেউ রান্না করতে পারে।’ এই কথাটা শুধু রান্নার ক্ষেত্রেই নয়, জীবনের সব ক্ষেত্রেই সত্যি। তুমি যদি কোনো কাজে মন থেকে চেষ্টা কর, তবে তুমি-ও পারবে।