ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

মাদকের আখড়ায় অভিযান, হামলার শিকার র‌্যাব-পুলিশ

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০৩:৪৫ এএম
গাজীপুর জেলায় অবস্থিত কালিয়াকৈর উপজেলা। ছবি- সংগৃহীত

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মাদকের আখড়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার শিকার হয়েছেন র‌্যাব-পুলিশ সদস্যরা। রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোররাতে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন র‌্যাব ও পুলিশসহ কমপক্ষে চারজন মাদক ব্যবসায়ী। উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের কড়ইতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে দু-দিন ধরে সোমবার পর্যন্ত চলমান রয়েছে র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযান।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের কড়ইতলী এলাকায় আমিনুল ইসলামের মৎস্য খামারের পাড়ে একটি মাদকের আখড়া রয়েছে। ওই মাদকের আখড়া থেকে মাদক সরবরাহ করায় ওই এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকের বিস্তার হচ্ছে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।

গত রোববার রাতে ওই মাদকের আখড়া থেকে ইয়াবার একটি বড় চালান লেনদেন হবে। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর কয়েকজন সদস্য সাদা পোশাকে ওই মাদকের আখড়ায় অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ইয়াবাসহ হাতেনাতে আটক করে র‌্যাব।

বিষয়টি অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীরা জানতে পেরে তারা দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে কয়েকজন র‌্যাব সদস্যদের উপর হামলা করে। ওই হামলার খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের সদস্য ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপরও হামলা করে মাদক ব্যবসায়ীরা।

এসময় কয়েকজন র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও তাদের নাম উল্লেখ করেনি পুলিশ।

কিন্তু ওই মাদকের আখড়ায় এমন ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছলে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

এসময় জহিরুল ইসলাম নামে এক মাদক ব্যবসায়ী মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার সময় এক অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ওই মাদক ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হন।

পরে আহত অবস্থায় জহিরুলকে উদ্ধার করে অন্য মাদক ব্যবসায়ীরাসহ তার পবিরারের সদস্যরা তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। কিন্তু কোন হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এ বিষয়টি তারা গোপন করেন।

ওই মাদক ব্যবসায়ী জহিরুল পাশের নয়াপাড়া এলাকার হেলাল উদ্দিন সরকারের ছেলে ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আলাল উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করতে পারেনি আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা।

এ ঘটনার পর দুদিন ধরে সোমবার পর্যন্ত র‌্যাব ও পুলিশ ওই মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।

তবে এ বিষয়ে র‌্যাব-১ এর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অপরদিকে এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ইউপি সদস্য আলাল উদ্দিনের ছেলে সেতু, ভাতিজা জহিরুল ওরফে জহিরসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন যুবক মিলে ওই মাদকের আখড়া পরিচালিত করছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বোয়ালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাল উদ্দিন জানান, ‘আমি শুনেছি, ১০০ ইয়াবা ট্যাবলেট একজনে নিবে। সেটা আমার ভাতিজা জহিরুলসহ কয়েকজন জানতে পারে। পরে তারা যে মাদক দেয় ও যে মাদক নেয় তাদের দুজনকেই ধরবে। এ জন্য ভাতিজারা আগে থেকে ওই স্পটের পাশে উৎপেতে ছিল।’

‘এসময় দুজন লোক একটি মোটর সাইকেল নিয়ে আসেন, পরে তারা সিভিলে থাকায় চিনতে না পেরে মাদক ব্যবসায়ী ভেবে ওই দুজনের উপর এ্যাটাক করে। এরপর প্রশাসনের লোক পরিচয় পেয়ে আমার ভাতিজারাও ভেইগা যায়। কিন্তু তাদের গায়ে পোশাক থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না। আর মাদকের সাথে আমি বা আমার ছেলে ও ভাতিজা জহিরুল সম্পৃক্ত নয়।’

তবে জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়েকজন জড়িত বলেও জানান তিনি।  

এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এসআই) সুরুজ জামান বলেন, ‘র‌্যাবের উপর মাদক ব্যাসায়ীদের হামলার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু আমাদের উপর হামলা হয়নি।’

এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।