ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

নামজারির দুর্ভোগ চরমে, আরএস হলে ভোগান্তি ‘সীমাহীন’

মো. আরাফাত, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০৬:২১ এএম
ভূমি মালিকরা জমি নামজারি/খারিজ করতে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। ছবি- সংগৃহীত

ভুমির মিউটেশন বা নামজারি অথবা খারিজ যেটিই বলা হোক তার প্রক্রিয়া এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা সরকারি নিয়মে। অথচ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার মো. মিজান ভূমি অফিসে ঘুরছেন চার মাসের বেশি সময় ধরে। কাজ এখনও শেষ হলো না। কবে শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না।

আনোয়ারার এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার জায়গার নামজারি করতে এসেছি চার মাস ধরে। প্রতিবার নতুন অজুহাতে ফাইল আটকে রাখা হয়। এমন হয়রানি আগে কখনও দেখিনি।’

সেখানকার আরেক বাসিন্দা আবদুল কাইয়ুমেরও একই পরিস্থিতি। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সব নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তারপরও দালাল ছাড়া ফাইল নড়ে না।’

সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি সেবা চালুতে সহজ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দালাল ছাড়া ভূমি খারিজের কাজে ভোগান্তির শেষ নেই। পদে পদে তাদের আটকে যেতে হয়। নতুন নতুন জটিলতা তাদের সম্মুখিন হতে হয়।

বিশেষ করে দলিলে আরএস দাগ থাকলে নামজারি প্রক্রিয়া আরও জটিল ও দীর্ঘসূত্রিতায় পরিণত হচ্ছে বলে সেবাপ্রত্যাশীরা জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, আনোয়ারায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক ত্রিপুরা দায়িত্ব গ্রহণের পর এই হয়রানি প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে শত শত ভূমি মালিক তাঁদের বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠায় চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন।

তাদের ভাষ্য, সামান্য ভুলত্রুটি দেখিয়ে বারবার ফাইল ফেরত পাঠানো হচ্ছে, কোনো নোটিশ ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে ফাইল আটকে রাখা হচ্ছে।

এতে প্রতিদিনই ভূমি অফিসে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন, কর্মকর্তাদের অবহেলা, দায়িত্ব এড়িয়ে চলা এবং সেবার পরিবর্তে অযথা জটিলতা সৃষ্টি করে জনগণের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

ভুক্তভোগী আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছেন যা স্পষ্ট দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়ম।’

আনোয়ারার সচেতন নাগরিকরা বলেন, ভূমিসেবা জনগণের মৌলিক অধিকার। সরকারের ডিজিটাল ভূমি সেবা চালুর পর সেবা সহজ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। মাঠ পর্যায়ে কিছু কর্মকর্তা এই জটিলতার সুযোগ নিচ্ছেন যা দৃষ্টিকটূ অনিয়ম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আনোয়ারার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি কবির আহমদ বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তির এই চিত্র উদ্বেগজনক। দ্রুত তদন্ত করে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

ভূমি মালিকরা বলেন, এই হয়রানি বন্ধ করে সেবা নিশ্চিত করতে উর্ধ্বতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। জনগণের সঙ্গে এমন আচরণ চলতে পারে না, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ভুক্তভোগী মো. মিজান বলেন,  ‘আমরা আইন মেনে কাজ করতে চাই, কিন্তু কেন হয়রানির শিকার হতে হবে?’

এ বিষয়ে জানতে আনোয়ারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দীপক ত্রিপুরার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, “আমি এই প্রথমবার বিষয়টি শুনছি।’

‘কেউ যদি সঠিক তথ্য-ভিত্তিক লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’, যোগ করেন এই কর্মকর্তারা।