আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সাংগঠনিক বিভাগগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বিএনপি। আগেরদিন শুরু হওয়া দ্বিতীয়দিন সোমবারও (২৭ অক্টোবর) বিভিন্ন বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দলটি। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এদিন বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত অব্দি বেশ কয়েকটি বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে চলে মতবিনিময়। সভাগুলোতে তাদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে দ্বিতীয়দিন রাতে ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন তারেক রহমান। কথা বলতে গিয়ে তিনি হয়ে পড়েন আবেগতাড়িত। তখন সভাজুড়ে তৈরি হয় আবেগঘন পরিস্থিতি। অশ্রুসিক্ত হোন মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের ঐক্য, ত্যাগ ও মূল্যায়ন বিষয়ে হৃদয়ছোঁয়া এক বিশেষ বক্তব্য দেন। তিনি যখন নিজের মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা বলেন, উপস্থিত নেতাদের মধ্যে কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
এ সময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তারেক রহমান বলেন, ‘আমার মা-ও মৃত্যুর মুখোমুখি ছিল। ইচ্ছে করলে মাকে নিয়ে আসতে পারতাম।’
‘কিন্তু মা তো আপনাদের ছেড়ে আসেননি। ছয়বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও মা আপনাদের ত্যাগ করেননি’, বলেন তিনি।
‘যিনি আপনাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই মাকে সামনে রেখে আপনারা এক থাকবেন’, যোগ করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমার মাকে চল্লিশ বছরের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মা তার সন্তানকেও হারিয়েছেন। কিন্তু সেই মা কখনো আপস করেননি।’
‘কারণ, তার লক্ষ্য ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা। ইচ্ছে করলে মা আপস করতে পারতেন, তবুও করেননি। কারণ, মা জানতেন—এই আপস জনগণকে দূরে সরিয়ে দেবে।’
একপর্যায়ে এক আদালতের ঘটনার উদাহরণ টেনে তারেক রহমান বলেন, ‘দুই মায়ের মধ্যে এক সন্তানের দাবিতে বিচারক বলেছিলেন, সন্তানকে দুই ভাগ করে দেবেন। তখন আসল মা বলেছিলেন, সন্তানকে ভাগ করবেন না, অন্যজনকেই দিন—আমি দূর থেকে দেখব।’
‘আসল মা তিনিই, যিনি সন্তানের ক্ষতি হতে দেননি। আমি চাই আপনারা সেই আসল মায়ের মতো হোন। ঐক্যের স্বার্থে ত্যাগ শিখুন।’
‘একজন প্রার্থীকে সবাই সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করুন। ঐক্যবদ্ধ থাকুন, তাহলেই বিএনপি এগিয়ে যাবে’, বক্তৃতার একপর্যায়ে নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ঢাকা বিভাগের মতবিনিময় রাত ৮টা থেকে শুরু হয়ে সভা চলে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও বক্তব্য দেন।
সভায় অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, ‘তার (তারেক রহমান) কথায় ছিল না রাজনীতি, ছিল এক মা ও ছেলের আত্মত্যাগের গল্প।’
‘ (তারেক রহমানের) সেই গল্পের ভেতরেই ছিল দলীয় ঐক্যের বার্তা’, যোগ করেন ওই নেতা।
দ্বিতীয়দিন ঢাকা ছাড়াও সিলেট, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান।
এরআগে, রোববার (২৬ অক্টোবর) রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তিনি।
প্রত্যেক বিভাগের নেতাদের নির্বাচনী পরিস্থিতি, ঐক্য রক্ষা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।


