ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

ভালোবাসার টানে ভিভোর বিশ্বভ্রমণ

মির্জা হাসান মাহমুদ
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:৫০ এএম

এমন কিছু মুভি আছে, যেগুলো রঙিন অ্যানিমেশন আর ছন্দময় গানের ভুবনে প্রবেশ করাতে পারে। এসব মুভি দেখলে মনে হয়Ñ পর্দায় নয়, যেন নিজের আশপাশেই ঘটছে সব। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া জনপ্রিয় এনিমেশন মুভি ‘ভিভো’ ঠিক এমনই একটি গল্প বলে। এই গল্পের কেন্দ্রে আছে এক ছোট্ট কিঙ্কাজু। এ ছাড়া আছে তার পরিবারের মতো প্রিয় মানুষদের স্মৃতি ও ভালোবাসা।

মুভির শুরুতেই দেখা যায়, কিউবান শহর হাভানার ব্যস্ততম এক মোড়ে রোদ পোহানো মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে ছোট্ট কিঙ্কাজু ভিভো তার মালিক আন্দ্রেসের সঙ্গে সংগীত পরিবেশন করছে। কিঙ্কাজু শব্দটি হয়তো অনেকের কাছে নতুন লাগছে তাই না? আসলে এরা ছোট আকারের এক ধরনের বনজ প্রাণী। দেখতে বানরের মতো হলেও কিন্তু এরা র?্যাকুন পরিবারের সদস্য। ভিভো ছোটবেলায় হারিয়ে গেলে আন্দ্রেস তাকে লালন-পালন করেন। আন্দ্রেস ভিভোকে ছোটবেলা থেকেই গান শোনাতেন। শিখিয়েছেন কীভাবে সুর

মানুষের হৃদয়ে পৌঁছায়। আন্দ্রেসের সঙ্গে প্রতিদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান করাই ভিভোর কাছে জীবনের আনন্দ।

কিছু সময় পরেই সহজ-সরল গল্পটি মোড় নেয়। একদিন আন্দ্রেসের কাছে একটি চিঠি আসে। চিঠিতে বিখ্যাত গায়িকা মার্তা স্যান্ডোভাল তার শেষ কনসার্টের জন্য আন্দ্রেসকে মায়ামিতে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেন। সেই গায়িকা আসলে আন্দ্রেসেরই এক পুরোনো বন্ধু। এই আমন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত আছে এক না-বলা ভালোবাসার গল্প; যেটা আন্দ্রেস বহু বছর আগে বলতে পারেননি। আন্দ্রেস একটি গান লিখেছিলেন মার্তার জন্য, কিন্তু কখনো মার্তাকে গানটি শোনানো হয়নি। এই চিঠি পাওয়ার পর আন্দ্রেস ঠিক করেন, এবার সেই গান মার্তাকে শোনাবেন।

তবে নিয়তি সবসময় পরিকল্পনা মতো কাজ করে না। যাত্রার আগের রাতে আন্দ্রেস মারা যান। তখন ভিভোর দায়িত্ব হয়ে যায় মালিকের লেখা সেই শেষ উপহারটি নিরাপদে মার্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া। এখান থেকেই শুরু হয় ভিভোর যাত্রা। অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে মিয়ামির পথে। যাত্রাপথে ভিভো পায় গাবি নামে এক নতুন সঙ্গী। গাবি তার জীবন যাপনে নিয়মকানুন পছন্দ করে না; সে নিজের মতো করে চলে। যদিও ভিভো আর গাবির বন্ধুত্ব শুরু হয় ভুল-বোঝাবুঝি দিয়ে, তবে পরে দুজনই একে অপরের ভরসা হয়ে ওঠে। শুরু হয় রোমাঞ্চঘেরা এক যাত্রা। পথের নানা বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে তারা পৌঁছে যায় মার্তা কাছে।

এই মুভির অন্যতম সৌন্দর্য হলো গান। ছবির প্রতিটি গানই গল্পের অংশ হয়ে ওঠে। লিন-ম্যানুয়েল মিরান্ডার রচিত গানগুলো বিশেষভাবে শিশুদের জন্য উপভোগ্য, কারণ এখানে ছন্দ আছে, মজা আছে। আবার কোথাও কোথাও আবেগও আছে। মুভির শেষদিকে যখন ভিভো সেই গানটি মার্তার হাতে পৌঁছে দেয়, সে দৃশ্য চোখ ভিজিয়ে দেয়। এই মুভি দর্শকদের মনে করিয়ে দেয়Ñ কারো কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে দেরি করা ঠিক নয়।

এই মুভির গল্পের মতো মুভির ইতিহাসটাও বেশ আকর্ষণীয়। মুভিটির পরিকল্পনা প্রথম শুরু হয়েছিল ২০১০–১১ সালের দিকে। তখন সনি পিকচার্স অ্যানিমেশন চেয়েছিল সংগীতনির্ভর একটি অ্যানিমেশন বানাতে; যেখানে থাকবে লাতিন আমেরিকার সাংস্কৃতিক ঢঙ। লিন-ম্যানুয়েল মিরান্ডা ছবিটির সুর ও গান তৈরির দায়িত্ব নেন শুরু থেকেই। তিনি তখনো এত বড় তারকা নন, তবে সংগীত নিয়ে তার কল্পনাশক্তি আগেই পরিচিত ছিল। সেই সময় ভিভোর প্রাথমিক গল্প লেখা হয়। কিন্তু স্টুডিওর পরিকল্পনা বদলাতে থাকে। যার কারণে মুভিটি কয়েক বছর আটকে যায়। পরে ২০১৬ সালে সনি ছবিটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নতুন আঙ্গিকে। পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান কার্ক ডেমিকো। অবশেষে ২০২১ সালে ভিভো মুক্তি পায়।