মিষ্টি হাসির নজরকাড়া সৌন্দর্যের এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড প্রমোটার জান্নাতুল মনি। শুরুতে তার যাত্রা এতটা সহজ ছিল না। একটু একটু করে পরিশ্রম দিয়ে আজ নিজেকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড প্রমোটার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
২০২৩ সালে অনেকটা শখের বসেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শর্ট ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিও তৈরি করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ফেসবুকের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে কাজ করেন বাণিজ্যিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বর্তমানে জান্নাতুল মনি একজন সফল ও পেশাদার ব্র্যান্ড প্রমোটার এবং ফ্যাশন কনটেন্ট ক্রিয়েটর। এখন তিনি নিয়মিত স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছেন।
জান্নাতুল মনির আসল নাম আশা মনি। অনেকটা শখের বশেই একসময় ফেসবুকে টুকটাক ভিডিও দিতেন। তখন থেকেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শাড়ি, জামার প্রমোশনের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন। এভাবেই তার যাত্রা শুরু। তার মাধ্যমের গ-ি মাগুড়াতেই কেটেছে। সেসময় স্কুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ছিলেন কিছুটা দুষ্ট স্বভাবের। এরপর ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। তিন বছর ধরে প্রমোশনে সরব তিনি।
শুরুর কথা জানিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জান্নাতুল মনি বলেন, ‘শুরুটা হয়েছিল ভিডিও কনটেন্ট নির্মাণের মাধ্যমে। সেজেগুজে শাড়ি পরে বিভিন্ন ভিডিও বানানো শুরু করি। বিভিন্ন গানের সঙ্গে লিপসিং করতাম। শুরুতে সেভাবে সাড়া না এলেও ধীরে ধীরে আশানুরূপ সাড়া আসে। এরপর আগ্রহও বাড়তে থাকে। একটা সময় ভিডিও ছড়িয়ে যেতে থাকে। এরপর চেনা গ-ি বড় হতে লাগল। বিভিন্ন ব্র্যান্ড কাজের প্রস্তাব দেয়। শাড়ি, থ্রি পিচ ও গহনার প্রমোশনের প্রতিনিয়ত প্রস্তাব আসতে থাকে। সেসময় তারা আমাকে খুব উৎসাহ দেয়। একটা সময় নিজেও আগ্রহী হই। কয়েকটি প্রমোশনের কাজ করে ব্যাপক সাড়া পাই। এভাবেই সূচনা।’
এ পেশায় প্রতিবন্ধকতা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পথচলার শুরুটা সহজ ছিল না। সামাজিকভাবেও নানা ধরনের কথা শুনতে হয়েছিল। এখনো আমাকে নিয়ে গ্রাম্য গসিপ হয়। তবে শুরু থেকেই এসব পাত্তা দেইনি। নিজের মতো করে এগিয়ে গেছি। পথচলায় পরিবারের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন ছিল বলেই আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি। আশপাশের মানুষের অনেক কথা শুনতে হলেও কখনো এ নিয়ে মন খারাপ হয়নি। একটা সময় যারা নেতিবাচক মন্তব্য করতেন, এখন তারাই সেলফি তোলার বায়না ধরেন’Ñ যা বেশ উপভোগ করেন লাস্যময়ী মিষ্টি হাসির এই তরুণী।
শৈশবে ভালো একজন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও হয়েছেন ব্র্যান্ড প্রমোটার।
বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নেও আসে পরিবর্তন। প্রমোশনে নাম লেখিয়ে এখন এ মাধ্যমেই নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান জান্নাতুল মনি। ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবেই নিজেকে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে চান।
তবে কাজ করতে গিয়ে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেও পরক্ষণে তা সহজেই মানিয়ে নিতেন। কখনো পিছু না হেটে এগিয়ে চলার ভাবনায় ছিলেন। আগামী পাঁচ বছরে নিজেকে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে চান জান্নাতুল মনি। জীবনটাকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চান। স্বপ্ন দেখছেন নিজেকে ব্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার।
জান্নাতুল মনির ‘জান্নাত ফ্যাশন হাউস’ নামে একটি পেজ রয়েছ, যা তার নিজ বাসা থেকেই পরিচালিত হয়। যেখান থেকে যে কেউ অনায়াসে পছন্দের শাড়ি, থ্রি প্রিস, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের ড্রেস, বোরখাসহ আরও যাবতীয় অনেক কিছু ক্রয় করতে পারবেন। এটা নিয়েও নানা স্বপ্ন বুনেছেন তিনি। শিগগিরই একটি শোরুম চালু করবেন বলে আলাপকালে জানিয়েছেন। যারা ব্র্যান্ড প্রমোটার পেশায় নাম লেখাতে চায় তাদের উদ্দেশ্য পরামর্শ দিয়ে জান্নাতুল মনি বলেন, ‘কোনো কাজই ছোট না। মনোযোগ দিয়ে কিছু করলে একদিন না একদিন তার সফলতা আসবেই। যারা এ পেশায় আসতে চায় তাদের জন্য সবসময় শুভকামনা।’
সেইসঙ্গে জানালেন, প্রমোশনের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার আগ্রহ রয়েছে মনির। সঠিকভাবে টেলিভিশন নাটকে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেলে সেই প্রস্তাবও লুফে নিতে চান। নিজের নামের সঙ্গে কিছু ভালো কাজ যুক্ত করার জন্য মুখিয়ে আছেন। তবে তার সব ধ্যানজ্ঞান ব্র্যান্ড প্রমোশন ঘিরেই।

