এজেন্ট ব্যাংকিং হলো প্রথাগত ব্যাংক শাখার বাইরে একটি সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা প্রদানের পদ্ধতি। এটি মূলত বৈধ এজেন্সির চুক্তির অধীনে নিযুক্ত এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংকিং সেবার বাইরে, সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিং এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি যেমন গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করেছে, তেমনি অনেক উদ্যোক্তার জন্য তৈরি করেছে একটি লাভজনক এবং সম্মানজনক ক্যারিয়ারের পথ। অনেকে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করতে পারেন এজেন্ট বাংকিং ব্যবসা। এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসায় ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলছেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের হেড ইঞ্জিনিয়ার ফিরোজ কবির।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রধানত দুই ধরনের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে:
এজেন্ট বা আউটলেট মালিক হিসেবে:
এটি মূলত স্ব-উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ব্যবসায়িক সুযোগ। আপনি নিজেই একটি ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্ট হিসেবে আউটলেট স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারেন। আপনি একটি ব্যাংকের পক্ষে সীমিত পরিসরে নগদ জমা ও উত্তোলন, অর্থ স্থানান্তর, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, রেমিট্যান্স সংগ্রহ, ক্ষুদ্র ঋণ প্রক্রিয়া এবং হিসাব সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা প্রদান করবেন।
যোগ্যতা ও প্রস্তুতি:
পুঁজি:
এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন এবং নিরাপত্তা জামানত হিসাবে বিনিয়োগের সক্ষমতা থাকতে হবে (যা ব্যাংক ভেদে ভিন্ন হতে পারে)।
অবকাঠামো:
ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি ভালো অবকাঠামো (আউটলেট) থাকতে হবে।
ব্যবসায়িক সক্ষমতা:
আর্থিক ব্যবসা ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা, নগদ লেনদেন পরিচালনায় দক্ষতা, এবং স্থানীয় বাজার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব:
সততা, পেশাদারি মনোভাব, এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গ্রাহককে সেবা প্রদানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা অপরিহার্য।
আয়ের উৎস:
আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, রেমিট্যান্স সংগ্রহ এবং অন্যান্য সেবার ওপর ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত কমিশনের মাধ্যমে এজেন্টরা আয় করে থাকেন। সফল এজেন্টের মাসিক আয় সন্তোষজনক হতে পারে।
সুবিধা:
নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা, স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখা এবং একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার অংশ হওয়া।
ব্যাংক প্রতিনিধি বা কর্মচারী হিসেবে:
বিভিন্ন ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম তদারকি এবং পরিচালনার জন্য নিজস্ব কর্মচারী নিয়োগ করে। ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত এই প্রতিনিধিরা এজেন্ট আউটলেটগুলোতে কাজ করেন বা একাধিক আউটলেট তদারকি করেন। তাদের কাজ হলো আউটলেটের সামগ্রিক তদারকি, নতুন ব্যবসা সংগ্রহ, গ্রাহকের সম্পর্ক জোরদার করা, বিক্রয় কৌশল বাস্তবায়ন এবং এজেন্টের কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া।
যোগ্যতা:
সাধারণত স্নাতক ডিগ্রি বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়। নতুন গ্র্যাজুয়েটদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পান।
দক্ষতা:
শক্তিশালী যোগাযোগ দক্ষতা, দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা, এবং ভৌগোলিক গতিশীলতা প্রয়োজন হতে পারে।
সুবিধা:
এটি সরাসরি ব্যাংকের একটি চাকরি, যেখানে নির্দিষ্ট বেতন, অন্যান্য সুবিধা এবং ভালো কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে স্থায়ী পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ থাকে।
এজেন্ট হতে হলে নিতে হবে চ্যালেঞ্জ
বিনিয়োগের পরিমাণ:
এজেন্ট হিসেবে শুরু করতে প্রাথমিক বিনিয়োগের (যেমন নিরাপত্তা জামানত, অফিস সেটআপ, নগদ টাকা) প্রয়োজন হয়, যা অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জিং।
কমিশন ও মুনাফা:
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অনেক সময় কমিশন হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না থাকলে মুনাফা অর্জন কঠিন হতে পারে।
নিরাপত্তা ও তদারকি:
নগদ টাকার লেনদেন হওয়ায় আউটলেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ব্যাংকের কঠোর নিয়ম-কানুন ও লেনদেনের সীমা মেনে চলা জরুরি।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা:
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত এই সেবাটি দ্রুত প্রসার লাভ করছে। গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে আর্থিক সেবার আওতায় আনার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
এর ফলে এজেন্ট ব্যাংকিং খাতে গ্রাহক সংখ্যা, আমানতের পরিমাণ এবং আউটলেটের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা উদ্যোক্তা হতে চান এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে আগ্রহী, তাদের জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং একটি উজ্জ্বল এবং প্রতিশ্রুতিশীল নিশ্চিত ক্যারিয়ারের পথ।

