বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০২:২৬ পিএম

প্রযুক্তি খাতে প্রত্যাশার প্রতিফলন নেই

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০২:২৬ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এই বাজেটে প্রযুক্তি খাত-সংশ্লিষ্টরা তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখছেন না। বিশেষ করে ডিজিটাল লেনদেনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে বৃদ্ধি, দেশীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোন সংযোজন ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বৃদ্ধি এবং ওভার দ্যা টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মের ওপর প্রথমবারের মতো ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের শুল্কারোপে ডিজিটাল লেনদেনে অনুৎসাহিত হবেন সাধারণ মানুষ। তবে ভোক্তা পর্যায়ে খুব ইতিবাচক প্রভাব না থাকলেও, ইন্টারনেট সেবা থেকে উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ইন্টারনেট খাতের ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ২২ ইঞ্চির বদলে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটরে ভ্যাট অব্যাহতিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিকেল ৩টা থেকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। লিখিত বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘অনলাইনে পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।’ এর ফলে ই-কমার্সসহ সব ধরনের ডিজিটাল লেনদেনে ভোক্তাপর্যায়ে খরচ বাড়বে বলে মত খাত-সংশ্লিষ্টদের।

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের সাবেক সভাপতি আয়আল কর্প লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আলমাস কবীর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, অনলাইন কেনাকাটায় ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়টি খুব খারাপ হয়েছে। সবাই যেখানে চাচ্ছি ডিজিটাল ইকোনমি প্রসারিত হোক, সেখানে এটা ব্যয়বহুল হলে মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে অনুৎসাহিত হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণ ছেলেমেয়েরা, এমনকি গৃহবধূরা অনলাইন ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তারাই অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এই সিদ্ধান্তে তাদেরসহ সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনে ভ্যাট বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব ই-কমার্স খাতের বৈদেশিক বিনিয়োগের ওপর পড়বে বলেও আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। অনলাইন মার্কেটপ্লেসভিত্তিক দেশের শীর্ষ ই-কমার্স দারাজ বাংলাদেশের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস রুশো বলেন, ‘নতুন ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবের ফলে ই-কমার্স ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য ব্যয় বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হবে, যা উদ্যোক্তা ও ভোক্তা উভয়ের ওপরই প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে। এই অতিরিক্ত ব্যয় বিক্রেতাকে বহন করতে হবে অথবা পণ্যের দামে যুক্ত হয়ে ভোক্তার ওপর পড়বে। এর ফলে ই-কমার্স ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

যেমন দারাজের ৯৫ শতাংশ বিক্রেতাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই), যাদের ওপর এই অতিরিক্ত ব্যয় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে। এই ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে ই-কমার্স খাতের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের অগ্রযাত্রা নিম্নগামী হবে। এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য প্রবাহ থাকলেও, ভবিষ্যতে তা হ্রাস পাবে।

এদিকে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা হ্রাসপূর্বক আগামী ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পুরোপুরি হ্রাস হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসেবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এই খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতো। তবে বিদ্যমান ভ্যাট হার বাড়িয়েছে সরকার। মোবাইল ফোন উৎপাদনের তিনটি পর্যায়ে আগে ভ্যাট ছিল যথাক্রমে ৩, ৫ এবং ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

আসন্ন অর্থবছরে এগুলো বাড়িয়ে যথাক্রমে ৫, ৭ দশমিক ৫ এবং ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। এর ফলে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্রানশন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘তিন ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদক ও সংযোজন পর্যায়ের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেই।

আগামী ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত ১৫ শতাংশ না করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। তবে তিনটি পর্যায়েই যে ভ্যাট বাড়ানো হলো এর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশীয় স্মার্টফোন উৎপাদনে। দেশের স্মার্টফোন বিক্রির ৬০ শতাংশ গ্রে-মার্কেটের (অবৈধ বা অনানুষ্ঠানিক উপায়ে দেশে আনা) দখলে। একটা ১৫ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্টফোনের দাম, গ্রে-মার্কেটের থেকে এখন প্রায় ৫০০ টাকা বাড়তি হবে। ফলে গ্রে-মার্কেটের তুলনায় অফিসিয়াল, এমনকি দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের দামও বাড়বে। দাম বাড়লে বিক্রি কমবে আর বিক্রি কমলে দেশীয় স্মার্টফোনের উৎপাদন কমবে।

এদিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সেবার ওপর প্রথমবারের মতো সম্পূর্ক শুল্ক (এসডি) আরোপ করা হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ওটিটি বা ওভার দ্যা টপ প্ল্যাটফর্ম সেবার সংজ্ঞা প্রদানপূর্বক এর ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।’ এতে বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাথে দেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম।

তিনি বলেন, নেটফ্লিক্স, হইচই, হটস্টার এ ধরনের বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে নিবন্ধিত না। তাদের থেকে কিন্তু এখনো সম্পূরক শুল্ক নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু বঙ্গো, চরকির মতো দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে কিন্তু সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে। তাহলে দেশীয়রা বিদেশিদের থেকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে গেল।

ইন্টারনেট সেবার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে কমিয়ে আনার প্রতিক্রিয়ায় আমিনুল হাকিম বলেন, অন্য সব করের সাথে উৎসে কর বাবদ কেটে নেওয়া কর হালনাগাদের পর যদি দেখা যেত যে, আমরা কর বেশি দিয়ে রেখেছি, সেটি খাতা-কলমে আমাদের ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এটা ফেরত পেতাম না। উৎসে কর কমানোতে হয়তো এই সমস্যাটা কমে আসবে, বলতে পারেন, আমরা একটা ন্যায়বিচার পেলাম। কিন্তু এর তেমন কোনো প্রতিফলন ভোক্তা পর্যায়ে নেই, কারণ গ্রাহককে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, সেগুলোতে কর রেয়াত পাচ্ছি না। গ্রাহকের ওপর খরচ না কমলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে কীভাবে?

এ বিষয়ে বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ইন্টারনেট সঞ্চালন ব্যবস্থায় ৫ শতাংশ ভ্যাট রেয়াতের কথা আমরা বলে আসছিলাম। ব্যান্ডউইথ আমদানিতে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এরপর ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিটি পর্যায়ে ওই ৫ শতাংশের ওপরও ভ্যাট দিতে হয়। এই ভ্যাট আমরা মওকুফ না করে, রেয়াতের কথা বলছি। এই সরকার ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই তাদের থেকে রেয়াতের প্রত্যাশা ছিল।

এদিকে ২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এতে দেশে উৎপাদিত মনিটরের দাম কমবে, ফলে দেশীয় পর্যায়ে মনিটরের উৎপাদন উৎসাহিত হবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। পাশাপাশি ই-বাইকের স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ফলে ই-বাইক উৎপাদন বাড়বে এবং গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমবে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!