জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চালু হয়েছে বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম (বিএসডব্লিউ) বা কাগজবিহীন পদ্ধতি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-সম্পর্কিত সব সেবায় এই পদ্ধতি এখন থেকে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ থেকে বাঁচতেই ২০১৭ সালের পরে বিশ^ব্যাংকের সহায়তায় নতুন পদ্ধতির শুরু করেছে এনবিআর।
সময় বাঁচিয়ে হয়রানি ছাড়াই এবং আস্থার সঙ্গে অনলাইনে ইস্যু করা হচ্ছে সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট। ইতোমধ্যে এই সংখ্যা ৪ লাখ ৩০ হাজার অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছে এনবিআর। তার আগে ‘র্যানডম সিলেকশন’ পদ্ধতিতে ১৫,৪৯৪টি আয়কর মামলা অডিটের জন্য নির্বাচন করেছে এনবিআর।
নতুন এই পদ্ধতি চালু হওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তা হলোÑ আমদানি-রপ্তানি পণ্যের জন্য প্রযোজ্য সার্টিফিকেট, লাইসেন্স এবং পারমিট সংক্রান্ত সব কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা এখন থেকে অনলাইনে সম্পন্ন করবে।
সরকারি কাজে ব্যক্তিগত যোগাযোগ (হিউম্যান ইন্টারেকশন) না থাকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও বাড়বে, পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সময় ও ব্যয় হ্রাস পাবে। একইসঙ্গে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
এনবিআরের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জনসংযোগ কর্মকর্তা আল আমিন শেখ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এনবিআরের আওতাধীন সিঙ্গেল উইন্ডে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিটের সংখ্যা ৪ লাখ ৩১ হাজার ১৬৯ মাইলফলক অতিক্রম করেছে। সহযোগী হিসেবে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গো-লাইভে যাওয়া বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা), ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ), বিস্ফোরক অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে এনবিআরের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যচালান শুল্কায়নের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট ১৯টি সংস্থা সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট এই সিস্টেম থেকে অনলাইনে দিতে সক্ষম। যেকোনো প্রয়োজনে কল সেন্টারে (হটলাইন-১৬১৩৯) ফোন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে সেবাগ্রহীতারা। গত ২ জানুয়ারি বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ) চালু করে এনবিআর।
আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে কাস্টমস এজেন্সিগুলোকে একক প্ল্যাটফর্মে আনা হয়েছে। ২০১৭ সালে গৃহীত এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো কাস্টমস সংক্রান্ত ১৯টি সংস্থার কার্যক্রমকে একত্র করা। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ সহজতর করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার লক্ষ্যও বহন করে। বর্তমানে বিএসডব্লিউর সিস্টেমের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম সম্পাদনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর করা হয়েছে। এরইমধ্যে এনবিআরের সঙ্গে ৩৮টি দপ্তর/সংস্থা/মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। এসব সংস্থা এরইমধ্যে তাদের অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এখন থেকে ব্যবসায়ীরা এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত সব ধরনের প্রশংসাপত্র, লাইসেন্স এবং পারমিট পেতে পারবেন। ফলে, কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য আর অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডোর সুবিধা: ২০১৭ সালে এনবিআর ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ প্রকল্প চালু করে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন থেকে এটি বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো নামে পরিচিত হবে। এর লক্ষ্য কাস্টমস-সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমকে একটি প্ল্যাটফর্মের অধীনে নিয়ে আসা।
এটি কাগজপত্রের ঝামেলা দূর করে এবং সময় বাঁচিয়ে ব্যবসা কার্যক্রম আরও সহজ করে তুলবে। এ প্ল্যাটফর্ম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-সম্পর্কিত পারমিট, লাইসেন্স, প্রশংসাপত্র এবং শুল্ক ঘোষণার প্রক্রিয়াগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করবে। আশা করা হচ্ছে, এটি ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র, সময় এবং খরচ কমাতে সাহায্য করবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নির্মিত এ প্ল্যাটফর্ম কর ফাঁকি রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।