চলতি বছরের মে মাসে ব্যাংক লেনদেনের প্রায় সব মাধ্যমে গতি ফিরেছে। একক মাস গত মে মাসে প্রথমবারের মতো কার্ডে লেনদেন ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন ধরনের লেনদেন হয়েছে মোট ৫০ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, আগের মাস এপ্রিলে যা ছিল ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন ছাড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা।
ই-কমার্সের লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি), ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও বেড়েছে লেনদেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে অর্থ লেনদেনের এই চিত্র পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের ব্যাংকগুলোয় গত জুনে চেকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। জুলাইয়ে এই লেনদেন এক ধাক্কায় ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে। আগস্টে চেকের মাধ্যমে লেনদেন কমে নেমে আসে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৬০ কোটি টাকায়। সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয়েছে আরও কম, ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। অক্টোবরে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৩ শতাংশের বেশি। নভেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা।
এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। মার্চ মাসে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এপ্রিল মাসে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ মে মাসে চেকের মাধ্যমে লেনদেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনের প্রধান মাধ্যম আরটিজিএস। এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে এই মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ১৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। মে মাসে আরটিজিএস মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এপ্রিল মাসে আরটিজিএস মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। লেনদেন ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে ইলেকটনিকস ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি)। এপ্রিল মাসে ইএফটি ব্যবহার করে লেনদেন হয়েছিল ৭১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। মে মাসে এসে ৮৫ হাজার ২৮৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
নগদ অর্থ উত্তোলন ও লেনদেনের জন্য জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোর একটি ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড ও প্রিপেইড কার্ড। একক মাস গত মে মাসে প্রথমবারের মতো কার্ডে লেনদেন ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন ধরনের লেনদেন হয়েছে মোট ৫০ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। আগের মাস এপ্রিলে যা ছিল ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে লেনদেন বেড়েছে ২২ দশমিক ৩২ শতাংশ। কার্ডের মতো ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের লেনদেনও বেড়েছে। এপ্রিল মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৯৯ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। মে মাসে তা বেড়ে ৯৯ হাজার ৬১৮ কোটি টাকায় ওঠে। অর্থ লেনদেন বেড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা হিসেবে পরিচিত এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (এমএফএস) মাধ্যমেও। এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। মে মাসে তা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫২ কোটি টাকায় ওঠে। এ ক্ষেত্রে লেনদেন বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চেয়েও বড় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লেনদেনে। এপ্রিল মাসে এই মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৬১ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। মে মাসে হয় ৬৮ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন বৃদ্ধির হার প্রায় ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। এপ্রিল মাসে ই-কমার্সে গ্রাহকদের ব্যয়ও বেড়েছে। এপ্রিল মাসে এই মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। মে মাসে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। ই-কমার্সের মাধ্যমে মাধ্যমে লেনদেন বৃদ্ধির হার প্রায় ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অর্থনৈতিক কর্মকা- ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোয় লেনদেন বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি দুই বছর আগের তুলনায় ভালো। রেমিট্যান্সে বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) ঘাটতি কমছে। ডলারের বিনিময় হার ও চাহিদাও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।’
আপনার মতামত লিখুন :