গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই-জুন সময়ে) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার রেকর্ড সর্বনি¤œ ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই সময়ে মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা অর্থ ছাড় হয়েছে। বিদায়ি অর্থবছরে সংস্থার নিজস্ব তহবিলের অর্থায়নসহ সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা কম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইটে ২০০৪-২৫ অর্থবছর থেকে গত ২০ বছরের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য দেওয়া আছে। ওই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে বিদায়ি অর্থবছরে। গতকাল বুধবার বিদায়ি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়নি বললেই চলে। এ ছাড়া আন্দোলনের সময়ে বেশ কয়েক দিন কারফিউ ছিল। বছরজুড়ে একধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতাও ছিল। তারা আরও বলেন, গত বছর ক্ষমতার পট পরিবর্তনে কয়েকজন প্রকল্প পরিচালককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। এসব কারণে প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা পুরোটা খরচ হয়নি।
৫২ হাজার কোটি টাকা কম খরচ বিদায়ি অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এমন ঘটনা খুব একটা ঘটেনি। কোভিডের শুরুর বছরে আগের বছরের কম খরচ হয়েছিল। তবে এত ব্যবধান হয়নি। গত অর্থবছরে এডিপির ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির ২ লাখ ৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ২০০৪-০৫ অর্থবছরের পর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত সংশোধিত এডিপির ৮০ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু গত অর্থবছরের মতো এত কম বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে বিদায়ি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সর্বমোট খরচ করেছে ৩০ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ ২৪ হাজার ১৭৫ কোটি ও সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ ১৩ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ৯ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ৮ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ৭ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ৭ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে কম খরচ করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। এই বিভাগের ১৫টি প্রকল্পের অনুকূলে ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে এসব প্রকল্পের কর্মকর্তারা মাত্র ৩৫০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এই বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৩৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ ৩৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৫৮ দশমিক ১৪ শতাংশ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৭২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ৭৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
এ ছাড়া কম বরাদ্দ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খরচ করেছে মোট বরাদ্দের ৯০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া তালিকায় আরও রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৯০ দশমিক ৭৬ শতাংশ, শ্রম ও কর্মসংস্থান ৮৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ৮২ দশমিক ৬৬ শতাংশ, আইন ও বিচার বিভাগ ৮৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৭৪ দশমিক ০৩ শতাংশ, পরিকল্পনা বিভাগ ৭০ দশমিক ০৪ শতাংশ ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।
আপনার মতামত লিখুন :