ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম নির্মিত মসজিদ হচ্ছে ‘মসজিদে কুবা’। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় যাওয়ার পথে কুবা নামক স্থানে ১৪ দিন অবস্থান করেন এবং এখানেই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
পবিত্র কুরআনের সুরা তাওবায় এই মসজিদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে- ‘মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই ধর্মকর্মের জন্য স্থাপিত হয়েছে, ওখানেই নামাজের জন্য তোমার দাঁড়ানো উচিত। ওখানে পবিত্র হতে চায় এমন লোক তুমি পাবে, আর যারা পবিত্র হয়, আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১০৮)
মসজিদে কুবা নির্মাণে অংশগ্রহণ করেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই। মদিনার কুবা পল্লীর কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.) নামের একজন সাহাবির খেজুর শুকানোর পতিত জমিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফ গোত্রের নেতা। নবীজি (সা.) তার আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং এই সময়েই মসজিদ নির্মাণ করেন।
হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, ‘মসজিদে কুবায় দুই রাকাত নামাজ একটি ওমরাহর সমান।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩২৪)
এছাড়া সাহাবি ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত- ‘রাসুল (সা.) কখনো হেঁটে, কখনো বাহনে চড়ে কুবা মসজিদে যেতেন এবং সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি)
কুবা মসজিদে চারটি সুউচ্চ মিনার, একটি বড় গম্বুজ এবং পাঁচটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। ছাদের অন্য অংশে রয়েছে ৫৬টি ছোট গম্বুজের নকশা। প্রায় ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন এখানে।
মসজিদটি ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর সময় প্রথম সংস্কার করা হয়। পরে আবু ইয়ালা আল-হোসায়নি, উসমানি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ এবং তার পুত্র প্রথম আবদুল মাজিদ বিভিন্ন সময়ে মসজিদটির সৌন্দর্যবর্ধন ও সংস্কার করেন।
সর্বশেষ বড় ধরনের সম্প্রসারণ হয় ১৯৮৬ সালে, সৌদি বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের শাসনামলে। এই সময় মসজিদে সাদা পাথর ব্যবহৃত হয় যা অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
মসজিদের ভেতরে রয়েছে উন্নত মানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, দামি কার্পেট, পৃথক অজুখানা ও নামাজের স্থান, লাইব্রেরি, আবাসন ও দোকান। রয়েছে সাতটি মূল প্রবেশদ্বার ও ১২টি সম্পূরক প্রবেশ পথ। তিনটি বৃহৎ এসি ইউনিট প্রতিটিই ১০ লাখ ৮০ হাজার থার্মাল ইউনিট ক্ষমতাসম্পন্ন।
মসজিদের আশপাশে রয়েছে সবুজ পামগাছের বলয়, যা মসজিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, মসজিদের মাঝখানে রয়েছে খোলা জায়গা যেখানে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারেন। রয়েছে জমজম পানির ব্যবস্থাও।
মদিনার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মসজিদে নববি থেকে কুবা মসজিদ পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। বর্তমানে এই পথে হেঁটে যাতায়াত সহজ করতে ‘কুবা স্কয়ার’ নির্মাণ করা হয়েছে। হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় ৪৫ মিনিট। চাইলে ব্যাটারি চালিত বাহনেও যাওয়া যায়।
আপনার মতামত লিখুন :