গত সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলেও শেষ দুই কার্যদিবসে বড় উত্থান হয়েছে।
এর পরও দাম বাড়ার তুলনায় কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে প্রায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান। তবে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ বড় মূলধনের কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় বেড়েছে মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে বেড়েছে বাজার মূলধন।
এর মাধ্যমে টানা আট সপ্তাহ শেয়ারবাজারে মূল্য সূচক ও বাজার মূলধন বাড়ল। এতে আট সপ্তাহের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ৬৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪০টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২২২টির। আর ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এর পরও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ২১৬ কোটি টাকা বা দশমিক ৬০ শতাংশ।
এর আগে গত ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদের পর থেকে শেয়ারবাজারে টানা ৮ সপ্তাহ দরপতন হয়। টানা ৮ সপ্তাহের পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ২৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। আর প্রধান মূল্য সূচক কমে ৫৮২ পয়েন্ট। টানা আট সপ্তাহ পতনের পর ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীনতার দেখা মেলে।
সেই থেকে শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহের আগের সাত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ৬১ হাজার ২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আট সপ্তাহের টানা উত্থানে বাজার মূলধন ৬৫ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহে প্রধান মূল্য সূচকও বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে বেড়েছে ৫১ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগের সাত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ে ৭৫৩ পয়েন্ট। এতে আট সপ্তাহের টানা উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ল ৮০৪ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। আগের সাত সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩৬০ পয়েন্ট। এর মাধ্যমে আট সপ্তাহে সূচকটি বাড়ল ৩৮৪ পয়েন্ট। তবে ইসলামি শরিয়াহর ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ২ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বা দশমিক ১৮ শতাংশ। আগের সাত সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৬১ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।
এদিকে, গত সপ্তাহের ডিএসইতে লেনদেনের গতি কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৩৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮৫৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৪০ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, যমুনা ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্যাংক এশিয়া, খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, রবি ও উত্তরা ব্যাংক।