দীর্ঘ মন্দা আর অনিশ্চয়তার পর দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারও আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। টানা কয়েক মাস ধুঁকতে থাকা বাজারে হঠাৎ সূচকের উল্লম্ফন ও লেনদেনের মাত্রা বাড়ায় অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারের উদ্যোগ, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশ ও বিনিয়োগবান্ধব সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। গত সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করে। একই সঙ্গে লেনদেনও হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে গতি ফেরাতে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু সাহসী উদ্যোগ। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৫ দফা নির্দেশনায় বাজার সংস্কারের আশ্বাস বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থা তৈরি করেছে।
এই নির্দেশনার মধ্যে রয়েছেÑ বহুজাতিক কোম্পানির সরকারি শেয়ার বাজারে ছাড়া, ভালো দেশীয় কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহ দেওয়া, বিদেশি বিশেষজ্ঞ দিয়ে বাজার সংস্কার, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং বড় কোম্পানিগুলোকে ঋণের বদলে শেয়ার বা বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহে উৎসাহিত করা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটেও পুঁজিবাজারবান্ধব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করের ব্যবধান বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করায় ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী হচ্ছে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারকে বিকল্প বিনিয়োগক্ষেত্র হিসেবে ভাবছেন।
এ ছাড়া সরকার পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ১০ হাজার কোটি টাকার স্বল্প সুদি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি ১০ হাজার কোটি টাকার ‘ক্যাপিটাল মার্কেট সাপোর্ট ফান্ড’ গঠনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ দুটি পদক্ষেপ পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।
ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ফিরে আসা আস্থা এখন অনেক স্পষ্ট। আগে যারা আশাহত হয়ে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারাও এখন আবার বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে মৌল ভিত্তি ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনতে আগ্রহ বাড়ছে। একজন খুচরা বিনিয়োগকারী বলেন, অনেক দিন পরে মনে হচ্ছে সরকার আসলেই পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবছে। আগের মতো আর অন্ধকারে নেই। এখন সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে বাজার আরও ভালো হবে।
বাজারে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে গত বাজেটের সময় থেকেই সরকারের দিক থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে আমানত ও ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের ঊর্ধ্বমুখী যে ধারা ছিল, সেটিও এখন কিছুটা স্থিতিশীল। নতুন করে সুদের হার না বেড়ে বরং কিছুটা নি¤œমুখী প্রবণতায় রয়েছে। এ কারণে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আবারও শেয়ারবাজারমুখী হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের উত্থানে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো ভালো কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাজার টেকসই ও স্থিতিশীল একটি রূপ পাবে। তবে ভালো শেয়ারের দামও যাতে অতিমূল্যায়িত না হয়ে যায়, সে জন্য এখন উচিত বাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানো।
আপনার মতামত লিখুন :