ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

বিনিয়োগ এক জায়গায় আছে ‘এক বছর’

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৩:৩১ এএম


রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে দেশের বেসরকারি বিনিয়োগে ধীরগতি তৈরি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি এলসি ২৫ শতাংশের বেশি কমে গেছে। একই সময়ে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। চলতি অর্থবছরে এই খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আরও কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলারের সংকট, তারল্য ঘাটতি, খেলাপি ঋণের উচ্চ প্রবণতা এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটÑ সব মিলিয়ে বিনিয়োগের পরিবেশ অনুকূল নয়। ফলে আগামী ছয় মাসে বেসরকারি বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আশা করছেন না ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বিনিয়োগ স্থবিরতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ সুদহার এবং খেলাপি ঋণের চাপ এই চারটি প্রধান কারণেই ঋণ প্রবৃদ্ধিতে টানা ধস চলছে। গত বছরের জুলাইয়ে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, তা কমতে কমতে জুনে এসে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশে। এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একবার প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছিল। করোনার কঠিন সময়েও এই হার সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে নামেনি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির নি¤œমুখী ধারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিগত সরকারের আমলে যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যাবসায়িক গোষ্ঠী বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল, তাদের অনেকেই বর্তমানে পলাতক বা কারাবন্দি। ফলে এসব গ্রাহকের নতুন ঋণ পাওয়া দূরের কথা, পুরোনো ঋণের বড় অংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা হয়েছে মাত্র ১৭৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৮ কোটি ৫১ লাখ ডলারের, যা ২৫ দশমিক ৪২ শতাংশ কমেছে। এর আগের বছরেও (২০২৩-২৪) এই খাতে এলসি খোলা কমেছিল ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি কমেছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যদিও শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা সামান্য কমলেও নিষ্পত্তি বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে নতুন বিনিয়োগে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিণ্টু। তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে আগে রাজনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কোনো উদ্যোক্তা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না।